বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন

28/09/2016 8:10 pmViews: 23
বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন
 
বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে একধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০৭ তম অবস্থান থেকে ১০৬ তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) বুধবার সারা বিশ্বে একযোগে এই সূচক প্রকাশ করেছে। সক্ষমতা সূচকে এক ধাপ অগ্রগতি হলেও সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে গতবছরের মতই ৩ দশমিক ৮।
বাংলাদেশে এই ফোরামের পক্ষে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এ উপলক্ষে বুধবার সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সিপিডির নির্বাহি পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
এবার ১৩৮টি দেশের তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ প্রতিবেদনের সাথে সাথে ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে একটি জরিপ প্রতিবেদনও তুলে ধরে সিপিডি। চলতি বছরের শুরুতে এ জরিপ করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা, অবকাঠামো, সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ‌্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্য বাজারে দক্ষতা, শ্রম বাজারে দক্ষতা, আর্থিক খাতের উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বাজারের আকার, বাজারের সংবেদনশীলতা এবং নতুনত্ব এই ১২টি সূচক বিবেচনা করে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত কর হয়েছে। প্রতিবেদনে ব্যবসায়ীক পরিবেশ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মতামতের বড় পরিবর্তন আসেনি। এবারো অবকাঠামো দুর্বলতা সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি দ্বিতীয় বড় বাধা হিসেবে দেখা হয়েছে দুর্নীতিকে। এর পরেই রয়েছে আর্থায়নের সমস্যা, আমলা তান্ত্রিক দুর্বলতা, কর হার, দক্ষ জনবলের অভাব, নীতি সহায়তার দুর্বলতা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিত ইত্যাদি।
এবারের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি, বাজারের সংবেদনশীলতা ও নতুনত্ব সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হলেও সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, শ্রম বাজারে দক্ষতা, আর্থিক খাতের উন্নয়ন ও বাজারের আকারে স্কোর কমেছে। আর স্বাস্থ‌্য ও প্রাথমিক শিক্ষা এবং পণ্য বাজারের দক্ষতা সূচকে স্কোর গতবছরের সমান রয়েছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো খাতসহ বেশ কয়েকটি মানদন্ডে উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে। তবে আমাদের মত নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের অগ্রগতির তুলনায় পিছিয়ে আছি। এজন্য আমরা যে হারে এগোচ্ছি, এর গতি আরো বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়েছে কিন্তু প্রতিযোগী সমকক্ষ অন্যান্য দেশ আরো এগিয়েগেছে। বাংলাদেশকে পরবর্তী পর্যায় বা মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে অবকাঠামো বিশেষ করে সমন্বিত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী, মানবসম্পদের উন্নয়ন, সুশাসনের জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে আরো নজর দিতে হবে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা এবারো দুর্নীতিকে দ্বিতীয় বড় বাধা আকারে দেখছেন। মান সম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি, সুশাসন পরিস্থিতিও সবচেয়ে দুর্বল উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে বেশি পরিবর্তন আসেনি, এক্ষেত্রে দূর্বলতা রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি এবং পরিবেশের মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।  দেশের ৬০ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, অর্থনৈতিক জোন তৈরি হলে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আছি। আমাদের লক্ষ্য উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তবে সূচকটি দুই বছরের গড় হিসেবে করা হয়েছে তাই বড় পরিবর্তন হয়তো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু এবছর যে পরিবর্তন আমরা দেখছি তাতে আগামি বছর এই সূচকে আরো এগুনোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতবারের মত এবারও বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সূচকে শীর্ষস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড, তাদের স্কোর ৫ দশমিক ৮। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, জাপান, হংকং ও ফিনল্যান্ড। চীন রয়েছে ২৮ তম অবস্থানে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত রয়েছে ৩৯তম অবস্থানে। গত বছর ৫৫ থেকে ভারত এই অবস্থানে উঠে এসেছে। ইন্দোনেশিয়া ৩৭ থেকে ৪১ তম অবস্থানে নেমে গেছে, নেপাল ১০০ থেকে ৯৮ তম অবস্থানে উঠে এসেছে, ভুটান ১০৫ থেকে ৯৭ তম অবস্থানে, পাকিস্তান ১২৬ থেকে ১২২ তম অবস্থানে উঠে এসেছে। অন্যদিকে শ্রীলংকা ৬৮ থেকে ৭১ তম অবস্থানে নেমেগেছে।

Leave a Reply