বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কঠোর অবস্থানে সরকার
ঢাকা : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এবার কঠোর অবস্থানে সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলাগুলো একটি কোর্টে এনে নিষ্পন্ন করা, বিরোধপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসক নিয়োগ এবং নতুন ক্যাম্পাসে যাওয়ার সর্বশেষ সুযোগ আগামী বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেধে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।রোববার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিভিন্ন অনিয়ম, মামলা সংক্রান্ত জটিলতা, অনিষ্পন্ন কার্যাবলী বিষয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দারুল ইহসান, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, কুইনস ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এবং আউটার ক্যাম্পাস বিষয়ে মামলা রয়েছে তা একটি কোর্টে এনে শুনানির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
ইবাইসসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবাদমান পক্ষগুলোর বিরোধ সালিশীর মাধ্যমে নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কর্যক্রম আইনানুগভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সরকার প্রশাসক নিয়োগ করে পরিচালনা করবে।
সভায় দীর্ঘ পর্যালোচনা করে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৭ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করা হয়নি, সেগুলোকে আগামী বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করতে হবে। অন্যথায় তাদের সাময়িক সনদ বাতিল করা হবে এবং উক্ত সময়ের পরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না।
যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নেই এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো প্রস্তাবও প্রেরণ করেনি, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই সরকার নিজ উদ্যোগে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগ দেবে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত অডিট করানো হয় না বা অডিট রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় না, তাদের বিরুদ্ধে শিগগির যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যৌথ উদ্যোগে একটি অডিট টিম গঠন করা হবে। এ টিম পর্যায়ক্রমে এসব বিশ্ববিদ্যালসমূহের অডিট বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর অসামঞ্জস্যপূর্ণ ধারাসমূহ সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সসমূহের শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে শিগগিরই অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই ক্রসবর্ডার হায়ার এডুকেশন অধ্যাদেশ জারি করা হবে।
একই সঙ্গে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতারণার হাত থেকে সতর্ক করার লক্ষ্যে সরকার ও ইউজিসি’র অনুমোদন বহির্ভূত বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
সভায় আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা যাচাই করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি যৌথভাবে নিয়মিত পরিদর্শন করবে এবং তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) কাজী সালাহ্উদ্দিন আকবর, ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর আতফুল হাই শিবলী, যুগ্ম-সচিব জিককুর রেজা খানম, ইউজিসি’র প্যানেল আইনজীবী এ বিএম বায়েজিদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।