বেশি রাত জাগলেই ক্যান্সারের ঝুঁকি
চলছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। বেশিরভাগ খেলাই বাংলাদেশের দর্শকরা দেখতে পারবেন গভীর রাতে। খেলা দেখতেই হবে, চার বছর পর আসে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত এই মহা আয়োজন। এটাও তাই মিস করা যাবে না। তবে রাত জেগে এভাবে ঢালাও খেলা দেখাও চলবে না, এ কারণে বেছে নিন প্রিয় দলের খেলাটি। অন্যগুলো এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, জীবনের চেয়ে খেলা বড় নয়।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাজ্যের গবেষকদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাত জেগে কাজ করলে দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ব্যাপক ধস নামে। অপূরণীয় ক্ষতি হয় দেহের। গবেষকরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই পেয়েছেন।
রাতের বেলায় কাজের সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকির সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। রাতের ঘুম কখনো দিনে ঘুমিয়ে পোষানো যায় না।
যুক্তরাজ্যের স্লিপ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা দেখেছেন, রাত জেগে কাজের যে কুফল তা গভীরতর আণবিক স্তরে পরিলক্ষিত হয়। রাত জাগার ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহতম বলে মনে হয়েছে তাদের।
গবেষকরা জানান, মানুষের শরীরে একটি দেহ ঘড়ি রয়েছে, যার ছন্দ হচ্ছে রাতে ঘুম আর দিনে কাজ। রাতে জাগার ফলে হরমোন পরিবর্তন, দেহের তাপমাত্রায় রদবদল, মেজাজ ও মস্তিষ্কে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ সাময়িকীতে। রাত জাগা ২২ ব্যক্তিকে নিয়ে তারা গবেষণা করে শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো খেয়াল করেন।
তাদের দাবি, রাতে অনিয়মিতভাবে কাজ করলে শরীরে কী ধরনের ক্ষতি হয় গবেষণার ফলে তা জানা সম্ভব।
সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সিমন আর্চার জানিয়েছেন, মানুষের জিনের ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে রাত জাগার ফলে পরিবর্তন দেখা দেয়। অনিয়মিতভাবে রাত জেগে কাজ করার ফলে দেহ ঘড়ির ছন্দ রক্ষাকারী জিন ৯৭ শতাংশ কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
উদাহরণ টেনে তারা বলেছেন, একটি বাড়িতে যদি সব ঘরে ঘড়ি থাকে এবং সব ঘড়িতে উল্টা-পাল্টা সময় দেখায় তবে ঘরের অবস্থা যা হতে পারে, এক্ষেত্রে রাত জাগার ফলে দেহঘড়ির অবস্থাও সেরকম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুস্থ থাকতে হলে প্রতিটি মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করে ঘুমাতে চাইলে তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে। ফলে ভালো ঘুম না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এতে করে ক্ষুধামান্দ্য, বিষণ্নতা, স্নায়ুবৈকল্য, কোষ্ঠকাঠিন্য নানা সমস্যায় ভুগতে পারে। রাত জাগা ব্যক্তির অনেকেই ঘন ঘন চা-কফি পান করে, এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে রাত জাগার ‘বদ অভ্যাস’ পরিহার করতে হবে। কারও যদি পাঁচটায় ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, তিনি কিন্তু চাইলেই পরদিন ১২টায় ঘুমাতে পারবেন না। ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। রাত জাগা কমিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। নিয়মিত ঘুম হলে স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে। বিশ্বকাপের খেলার সময়ও বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। প্রিয়দলের খেলা বাদে অন্য খেলাগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। রাত জাগার দিন প্রচুর পানি পান করুন। প্রিয় দলের ভোর বেলার খেলাগুলোতে আগের রাতে ঘুমিয়ে নিন, প্রয়োজেনে ঘড়ি, মোবাইল ফোনে এলার্ম দিয়ে রাখুন।