ঢাকা : স্বামীকে ফিরে পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কোনো ধরনের চাপের কাছে মাথা নত করে পেশাগত (বেলা) কাজ গুটিয়ে নেবো না। আর যদি তা করি তাহলে যারা বিভিন্ন সময় আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়ে গেলো।
শুক্রবার বিকেল ৫টায় স্বামী অপহরণের ঘটনার সার্বিক বিষয় তুলে ধরে রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অপহরণের ঘটনায় কাদেরকে সন্দেহ হয় সাংবাদিকদের এমন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি এজাহারে কারো নাম উল্লেখ করিনি। তবে পেশাগত কারণে যাদের সঙ্গে আমার মনমালিন্য রয়েছে তাদের একটি তালিকা আমি পুলিশের কাছে দিয়েছি, যারা সবাই প্রভাবশালী।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বামীকে ফিরে পাওয়ার পর এখনও নিরাপদ বোধ করছি না।
এ সময় তিনি পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
স্বামীকে অক্ষত ও সুস্থ ফিরে পেয়ে গণমাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রিজওয়ানা হাসান। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনা দেওয়ায় এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ উদ্বেগ প্রকাশ করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া অপহরণের ঘটনায় সুশীল সমাজ, দেশের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনসহ দেশবাসী পাশে দাঁড়ানোয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রিজওয়ানা হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, অপহরণের ঘটনাটি শুধু আমার পরিবারের বিষয় নয়। পুরো দেশবাসীর কাছে এটি নিজেদের অনিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি অনেক ঘৃণিত, গর্হিত অপরাধ। এটা যারাই করে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
অপহরণে ঘটনায় দায়ের মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উদ্ধার হওয়ার পর এ ব্যাপারে আমার স্বামী এ বি সিদ্দিক আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে’।
তিনি বলেন, জবানবন্দিতে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে কতক্ষণ সময় লেগেছে। স্পট থেকে বাসায় পৌঁছতে এবং ফিরে আসার সময় যেখানে রিকশা নিয়েছে সেখানে আসতে কত সময় লেগেছে। অপহরণকারীরা তার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে। তাদের ভাষা কেমন ছিল। তদন্তের স্বার্থে এবং অপহরণের মোটিভ সম্পর্কে জানতে এগুলো জিজ্ঞাসা করা হয়েছে।
রিজওয়ানা বলেন, ওর (স্বামী) কাছ থেকে আমি যেটুকু শুনেছি ওকে ধরে নেওয়ার পর থেকে তারা যেসব কথাবার্তা ওর সামনে বলেছে তাতে ও বুঝতে পারেনি কেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে। টাকার কথা আলোচনা হলেও বাসার ফোন নাম্বার নেয়নি এবং ওকেও টাকার কথা বলেনি।
তিনি বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশের পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। আশা করি এই কমিটি ঘৃণ্য এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।
রিজওয়াা বলেন, স্বামীকে ফিরে পেয়েছি শুধুমাত্র এতেই আশ্বস্ত হতে পারছি না। আর যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, বুধবার বিকেল সোয়া ৩টায় আবু বকর সিদ্দিক তার প্রাইভেটকারে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। ফতুল্লার ভূইয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে আসা মাত্র পেছন দিক থেকে একটি নীল রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস দিয়ে তার গাড়িতে ধাক্কা দেওয়া হয়। এ সময় গাড়ি থামিয়ে আবু বকর ও তার গাড়িচালক নেমে এলে ওই গাড়ি থেকে সাত থেকে আট জন যুবক লাঠিসোটা ও অস্ত্রের মুখে তাকে তুলে নিয়ে যায়।