বিশ্বকাপ ফুটবল-২০১৪ বিশ্বকাপের জমকালো পর্দা উঠছে আজ
ঢাকা, ১২ জুন : অপেক্ষার পালা শেষ, ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০তম আসরের পর্দা উঠছে আজ। ইতোমধ্যে আয়োজক দেশ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরেও সবরকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৬৫ হাজার দর্শক ও টিভির পর্দায় চোখ রাখবে কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীক।
বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাজিলের সাও পাওলোর করিন্থিয়ান স্টেডিয়ামে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে।
৬৪ বছর পর আবার ব্রাজিলে বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে। এ পর্যন্ত যে ক’টি বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে এবারের মতো আর কোনো বিশ্বকাপ আসর এতোটা ঝামেলাপূর্ণ হয়নি। এতোটা শংকার মধ্যে মাঠে গড়ায়নি বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরটি।
উদ্বোধনী ম্যাচে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার হাড্ডাহাড্ডি ফুটবল লড়ায়ের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠছে বিশ্বকাপ ২০১৪-এর। তবে ১৯৫০ আর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ তো এক কথা নয়। আধুনিক সময়ের বিশ্বকাপের সফল আয়োজক হওয়ার মতো সব রকমের যোগ্যতা কি ব্রাজিলের আছে? কয়েক বছরে উড়তে থাকা এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চলেছে ফুটবল ঐতিহ্যের এই দেশটি।
উদ্বোধনের ৪০ ঘণ্টা আগে সে দেশের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রাজিল এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। আশা করি এটা হবে সফল আয়োজন। ফিফা সভাপতি গত কয়েক বছর ধরেই নানা ত্রুটি নিয়ে ব্রাজিলের সমালোচনা করে আসছিলেন। সেই সেপ বস্নাটারও এখন ব্রাজিলের পক্ষে কথা বলছেন। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি থাকা সত্তেও গ্রেট আয়োজন হতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন তিনি।
ব্রাজিল ফুটবলের দেশ। এখানে ফুটবল ছাড়া অন্য কিছু ভাবাই যায় না। ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবল হলে এই খেলাটা আরো অনেক বেশি উপরে উঠবে, আরো বেশি জনপ্রিয়তা পাবে এবং এর মর্যাদাও বাড়বে। তাছাড়া দেশটি ব্রাজিল বলেই দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্বটি পেতে সমস্যা হয়নি। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা যেন এখন ফিফার জন্য গলার কাঁটা হয়ে বিঁধেছে। ফিফার সাধারণ সম্পাদক জেরেম ভালচকে গত ছয় বছরে কতোবার যে ব্রাজিলে এসেছেন তার কোনো হিসাব নেই। ফরাসি এই ভদ্রলোক আগেই বলেছিলেন, বাঁশি বাজার আগে হয় তো স্টেডিয়াম প্রস্তুত হবে না। নিজে সরেজমিনে দেখছেন বিশ্বকাপ নিয়ে প্রতিবাদকারীরা কতটা সোচ্চার এবং তাদের অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট ভেস্তে যায় কিনা, তা নিয়েও শংকায় ছিলেন এবং এখানো যে নেই সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণটা হয়তো আড়ালেই থাকছে। তবে আয়োজনে ত্রুটি থাকলেও এখন একথা বলা যায় খেলা মাঠে গড়াতে ব্রাজিল প্রস্তুত।
দ্য গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ, এর উপর শুধু ফুটবল অনুরাগীদেরই চোখই থাকবে না তামাম দুনিয়ার নজর এখন ব্রাজিলে। হোক সেটা দিন-মজুর কিংবা দেশের রাষ্ট্রপতি। চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে। খেলার দুনিয়ার মানুষগুলো এই অপেক্ষায় থাকেন ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ আবার কবে আসবে।
বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকরা এবার খেলা দেখবেন রাত জেগে। কিছুদিন পরই রমজান মাস। রাত জাগতে কষ্ট হবে। তারপরও ধারণা করা যায় তারা খেলা দেখার সুযোগ
খোয়াবেন না। কারণ ব্রাজিলে বিশ্বকাপ ফুটবল আর দেখা যাবে না কিনা কেউ জানে না। তাই টিভির পর্দায় কালো মানিকের দেশের বিশ্বকাপ দেখাটাও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর।
ব্রাজিলের ১২টি স্টেডিয়ামে সব পর্ব মিলিয়ে ৬৪টি ম্যাচ হবে। ১২ জুন বাংলাদেশের সময় রাত ২টায় ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার খেলা দিয়ে শুরু হবে এই ফুটবল যুদ্ধের যার শেষ ১৩ জুলাই। ফাইনালের মঞ্চে ওঠার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ৩২ দল এখন যার যার ভেন্যুতে পৌঁছে গেছে। ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়া। কিন্তু প্রতিযোগিতার উদ্বোধন হবে সাও পাওলো শহরে। এটি অনেকটা আমাদের বান্দরবানের মতো পাহাড়ের শহর। উঁচু-নিচু পথ। রাস্তা থেকে কোরিন্থিয়ান্স স্টেডিয়ামটি আড়াই হাজার ফিট উপরে। ১৯৭৪ সালে নির্মিত স্টেডিয়ামটি ২০১০ সালে নতুনভাবে সংস্কার করার কাজ শুরু হয়। এখনও কাজ চলছে। তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গিয়ে মঙ্গলবার ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহদের। ৬৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা থাকলেও দ্রুত কাজ করতে গিয়ে স্টিল স্ট্রাকচারের গ্যালারি দাঁড় করানো হয়েছে। যেখানে ২০ হাজার দর্শক বসতে পারবেন। বৃষ্টি হলে ভিজতে হবে।