বিল পাস : ভোটাধিকার হারালো দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীরা
যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্তরা ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবে না এবং যারা ভোটার তালিকাভুক্ত আছে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিধান করে ‘ভোটার তালিকা (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০১৩’ সংসদে পাস করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ বিলও কণ্ঠ ভোটে পাস হয়।
রবিবার ভোটার (সংশোধন) বিল, ২০১৩ নামে এই বিলটি সংসদে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এছাড়া ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীর সভাপতিত্বে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা বিলের উপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তাদের অনুপস্থিতির কারণে তা উত্থাপিত হয়নি।
এদিকে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নন এমন নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিধান এবং পরিচয়পত্রের তথ্যকে গোপনীয় ও তা বেআইনীভাবে প্রকাশকে অপরাধ গণ্য করে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) বিল, ২০১৩’ নামে আরেকটি বিল সংসদে পাস করা হয়। এ বিলটিও আইনমন্ত্রী উত্থাপন করেন।
ভোটার তালিকা সংশোধন মূল আইনে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা ধারা-৭ এ নতুন দু’টি উপধারা (ঙ) ও (চ) যুক্ত করে বলা হয়েছে- ‘(ঙ) Bangladesh Collaborators (Speacial Tribunal) Order, ১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত না হইয়া থাকেন এবং (চ) International Crimes (tribunal) Act ১৯৭৩ এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত না হইয়া থাকেন।’
মূল আইনের ১৩ ধারা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে- ‘ভোটার তালিকা থেকে নাম কর্তন: নিম্নবর্ণিত যে কোনো কারণে ভোটার তালিকাভুক্ত কোনো ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা হইতে কর্তন করিতে হইবে, যথা-
ক) বাংলাদেশের নাগরিক না থাকিলে; খ) কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হইলে; গ) Bangladesh Collaborators (Speacial Tribunal) Order, ১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত হইলে; অথবা (ঘ) International Crimes (tribunal) Act ১৯৭৩ এর অধীনে কোনো অপরাধে দণ্ডিত হইলে’।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া এবং জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় পর্যায়ের যে কোনো নির্বাচনে ভোট প্রদান একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের সাংবিধানিক ও আইনী অধিকার। এ ধরনের অধিকার প্রাপ্তি ও প্রয়োগের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য। যে সব নাগরিক বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধীতা করেছেন ও যুদ্ধাপরাধসহ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এ সব অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে তাদের ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়া ও থাকা সমীচীন নয়। সে উদ্দেশ্যে ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ সংশোধন করা প্রয়োজন। বিলটি মহান সংসদে উত্থাপন করা হলো।’
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩
ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নন এরূপ নাগরিকদের জাতীয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের বিধান এবং পরিচয়পত্রের তথ্যকে গোপনীয় ও তা বেআইনীভাবে প্রকাশকে অপরাধ গণ্য করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩ পাস করা হয়েছে।
মূল আইনের ৫ ধারা প্রতিস্থাপন করে বলা হয়েছে, ‘১) ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ অনুসারে ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত প্রত্যেক নাগরিক, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকারী হইবেন। ২) উপধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুকনা কেন, কমিশন অন্যান্য নাগরিককে, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, পরিচয়পত্র প্রদান করিতে পারিবে।’
বিলের ১৩ দফা পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, ‘১) কমিশন তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য উপাত্ত সংরক্ষণ করিবে, ২) কমিশনের নিকট সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত গোপনীয় বলিয়া বিবেচিত হইবে। ৩) উপধারা (২) এ যাই কিছুই থাকুকনা কেন, নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কমিশনের নিকট সংরক্ষিত তথ্য উপাত্ত পাইবার আবেদন করিতে পারিবে এবং কমিশন উক্তরূপ চাহিত তথ্য উপাত্ত, ভিন্নরূপ বিবেচিত না হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করিবে’।
বিলে নতুন সংযুক্ত ১৬ (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি তথ্য উপাত্তে অননুমোদিতভাবে প্রবেশ করিলে বা বেআইনীভাবে তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব পাঁচ বত্সর কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।’
নতুন সন্নিবিশিত ১৭ (ক) ধারায় বলা হয়েছে- ‘কমিশনের কোনো সদস্য কর্মকর্তা, কর্মচারি বা উহার প্রতিনিধি অননুমোদিতভাবে তথ্য উপাত্ত কোনো ব্যক্তির নিকট প্রকাশ করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি অনূর্ধ্ব পাঁচ বত্সর কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবে।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, ‘ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত নন এইরূপ নাগরিকদেরকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধণ প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের কাছ থেকে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য উপাত্ত তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কমিশনে সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষা, সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত এই আইন ও তদধীন প্রণীত বিধি/প্রবিধানের বিধান সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান, তথ্য-উপাত্তে বেআইনী প্রবেশ বা অননুমোদিত প্রকাশকে অপরাধ গণ্যে দণ্ডের বিধানকল্পে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১৩ সংশোধন করা প্রয়োজন। উক্ত উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। বিলটি মহান সংসদে উত্থাপন করা হলো।’