বিভিন্ন জেলায় সেনা
দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সামরিক সূত্র বলেছে, নির্বাচন নয়, শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে কিছু সেনাসদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। রাতে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন প্রশিক্ষণ মহড়ায় নিয়োজিত রয়েছে।
তবে আজ শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এবার সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে। এঁরা ভোট গ্রহণের পরও বেশ কয়েক দিন মাঠে থাকবেন। এ কারণে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বাজেটও দ্বিগুণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন এক দিনে সম্পন্ন করা হয়। তাই প্রতিবারের মতো এবারও নির্বাচন পরিচালনায় আমাদের সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে শুক্রবার সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের জানানো হবে।’
এদিকে গতকাল দুপুর থেকে সাতক্ষীরা, যশোর, বরিশাল, কুষ্টিয়া ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, মানিকগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও পটিয়ায় সেনাসদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তবে তাঁরা কোনো টহল দেননি।
সাতক্ষীরা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সেনাবাহিনীর একটি দল সাতক্ষীরায় পৌঁছেছে। গতকাল তারা সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে অবস্থান নিয়েছে।
ফরিদপুর অফিস জানায়, সেনাবাহিনীর একটি দল গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে অবস্থান নেয়। এই দলে কর্মকর্তাসহ ১২০ জন সদস্য রয়েছেন। এদিকে গতকাল ফরিদপুরে আর্মড পুলিশকে গাড়িতে অস্ত্র তাক করে ফরিদপুর শহরে টহল দিতে দেখা গেছে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গিয়ে পৌঁছায়। দলটি সদর উপজেলার মান্দারী বাজারের ইউসুফ পাটোয়ারীর মুন্নি ব্রিকসে অবস্থান নিয়েছে।
বরিশাল অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ৮০ সদস্যের একটি সেনাদল বরিশালে পৌঁছায়। মানিকগঞ্জেও সেনাসদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন বলে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকেরা বলেন, শীতকালীন অনুশীলনের অংশ হিসেবে এসব স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের কাউকেই নির্বাচনের জন্য মোতায়েন করা হয়নি।
তবে যেসব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটছে, সেসব এলাকায় সেনাসদস্যরা অবস্থান নেওয়ায় মানুষ মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
সেনা সূত্র জানায়, কিছুদিন আগেই রংপুর ডিভিশনে শীতকালীন মহড়া শুরু হয়েছে। অন্য ডিভিশনের মহড়া শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর থেকে। এই মহড়ার আগাম প্রস্তুতির জন্য কয়েকটি স্থানে সেনাসদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তবে আজকের বৈঠকে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হলে এসব সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে লাগানো হবে কি না, সে ব্যাপারে পদস্থ সেনা কর্মকর্তারা কিছু বলতে চাননি।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী কবে থেকে মোতায়েন হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। তবে কমিশনের পক্ষ থেকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব করা হবে। মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তাবিত বাজেটের অঙ্ক ২৬ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আজকের বৈঠকের জন্য তৈরি করা কার্যপত্রে বলা হয়েছে, প্রতি জেলায় কমবেশি এক ব্যাটালিয়ন (৮০০) করে সশস্ত্র বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হবে। সেখানে তারা ক্যাম্প স্থাপন করবে। আর প্রতিটি উপজেলা বা থানায় দুই থেকে তিন প্লাটুন (প্রতি প্লাটুনে ৩৫ জন) করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনী দায়িত্বে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে থাকবেন একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যেসব স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করা হবে না, সেখানে ভ্রাম্যমাণ ইউনিট দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা কোনো ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটকক্ষে ঢুকবেন না।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে পাঁচ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, এবার সশস্ত্র বাহিনী ভোট গ্রহণের পরও বেশ কয়েক দিন মাঠপর্যায়ে অবস্থান করতে পারে। সশস্ত্র বাহিনী ২০০১ সালে ১৫ দিন এবং ২০০৮ সালে ১২ দিন অবস্থান করেছিল।
সূত্র: প্রথম আলো