বিচ্যুত হবো না আদর্শ থেকে

08/02/2017 10:22 amViews: 9

আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবো না

 

নিজের ‘অবস্থান’ ও ‘আদর্শ’ থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেছেন, তার ওপর ‘রিমান্ডের’ নামে যে নির্যাতন হয়েছে, এমন নির্যাতন আর কারও ওপর হয়নি। এতে তার শরীরে কঠিন রোগ যোগ হয়েছে বলে মেডিকেল রিপোর্টে এসেছে। রাষ্ট্র তার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি দাবি করেন, তার মতো অধিকারহীন মানুষ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন। গত ২৩শে নভেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর এই প্রথম মিডিয়ার মুখোমুখি হন মাহমুদুর রহমান। সংবাদ সম্মেলন মাহমুদুর রহমান কারাগারে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়া, বিদেশে চিকিৎসা নিতে না পারা এবং ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আট বছরে আমি পাঁচ বছর জেলে ছিলাম। রিমান্ডে নির্যাতনের কারণে কিছু অতিরিক্ত রোগ যোগ হয়েছে। এ জন্য মুক্তির পর কাশিমপুর থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তারা আমার কেস সামারিতে বললেন নিউরো সমস্যার জন্য জরুরি অপারেশন করতে। যেহেতু বিষয়টি জটিল, তাই বিদেশে গিয়ে করাই বাঞ্ছনীয়। পরে আদালত তার শারীরিক অবস্থা জানার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করেন। বোর্ড তাকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ তাকে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা করানোর জন্য অনুমতি দিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগ চারটি শর্ত দিয়েছেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, সুপ্রিমকোর্ট চার শর্তে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেন। শর্তগুলো হলো, আমি কেবল যুক্তরাজ্যে ৩০ দিন অবস্থান করতে পারবো। সেখানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারবো না। ঢাকায় ফিরে আসার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। যে মামলায় জামিন হয়েছে, সে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি যুক্তরাজ্যের ভিসার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করে। তিনি বলেন, তার মানে আমার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ারও সুযোগ নেই। কোর্টের আদেশের কারণে অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে পারবো না। তার মানে আমি চিকিৎসার অধিকারও বঞ্চিত। আমার মতো অধিকারহীন মানুষ বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সম্ভবত দ্বিতীয় আর কেউ নেই।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য তাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষের শক্তি, মুসলমানের পক্ষের শক্তি। ইসলামের পক্ষের শক্তি বলে ভিসা দেয়নি- এটা কীভাবে বুঝলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, এ কথাটি তো তারা মুখে বলতে পারবে না। তিনি বলেন, আমি ২০১২ সালেও যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলাম। ফিরে এসেছি। হয়তো তারা ভাবছে আমি সেখানে গিয়ে আর ফিরে আসবো না। মাহমুদুর রহমান জানান, তার বয়স এখন ৬৩। এই বয়সে এসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়) চাওয়ার ইচ্ছা নেই।
যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্য ভিসা না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, তিনি এ ঘটনায় দুঃখিত হলেও অবাক হননি। নিজের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বলেন, তিনি পূর্ণভাবে কর্মক্ষম নন। বর্তমানে তার কোনো কর্মক্ষেত্র নেই। বাসায় বসে লেখালেখি করছেন। কিছুক্ষণ লেখার পর হাত ব্যথা করে। জেলখানায় বসেও তিনি লিখতেন। নির্যাতনের কারণে ডান হাত উঠানো কষ্ট হয়। ডান হাত আটকিয়ে গিয়েছিল। ঠিকভাবে লিখতেও পারেন না। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আমার রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। আমার ওপরে যে নির্যাতন হয়েছে তার আর কারও ক্ষেত্রে হয়নি। তারপরও আমি আমার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবো না। ইসলামের পক্ষে মৃত্যু পর্যন্ত অবিচল থাকবো।
সংশয় প্রকাশ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি আজ যে বক্তব্য দিচ্ছি, আমি নিশ্চিত নই নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় এ বক্তব্য কতটা প্রকাশ হবে কিংবা কতটা অবিকৃতভাবে প্রকাশ হবে। বর্তমানে গণমাধ্যম সেলফ সেন্সরশিপ বলে অভিযোগ করেন তিনি। গত ২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে ১৫ জন সাংবাদিক নিহত, ৮৮৬ জন আহত, ২০০ জন গ্রেপ্তার এবং ২৬ জন কারাভোগ করেছেন বলে মাহমুদুর রহমান উল্লেখ করেন। ‘আমার দেশ’-এর প্রেস সংক্রান্ত এক মামলার কথা তুলে তিনি বলেন, প্রেস ফিরে আসলে আবার কাজ শুরু করতে পারবো। সংবাদ সম্মেলনে কবি ফরহাদ মজহার, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, রুহুল আমিন গাজী, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গণি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply