বিচারকরা অবসরে যাওয়ার পর রায় লিখতে পারেন না’
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘বিচারপতিদের অবসরে যাবার পর আর কোনো রায় লিখতে দেয়া হবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিচারকরা অবসরে যাওয়ার পর আর কোনো মামলার রায় লিখতে পারেন না।’ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় মৌলভীবাজার পৌর কমিউনিটি হলে জেলা আইনজীবী সমিতির বার্ষিক নৈশভোজ সভা ২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিচার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের দেশে অতীতে এ রকম রায় দিলেও এখন থেকে আর এ সুযোগ দেয়া যাবে না। আইন ও সংবিধান রক্ষায় আমাদের সংশোধিত হতে হবে। দেশে এখন গণতন্ত্র আসছে, সংবিধান আছে আইনের শাসন আছে এখন আমরা আইনে চলবো। সেই সামরিক আইনে চলবো না। আইনকে সুসম্মত রেখে চলবো। দেশের সংবিধানের রক্ষক হিসেবে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ হতে দেয়া হবে না।’
আইনজীবীদের কাছে অনুরোধ করেন, বিভিন্ন দেশে আইন বই এবং বিচার কার্যক্রম দেখে আইন পেশা পরিচালনা করা জন্য।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবীরা দেশের সংবিধান, আইনের শাসন, মানবাধিকার আপনারাই রক্ষার জন্য সোচ্ছার হন। কিন্তু আমার দুঃখ হয় যে, যেভাবে আইন পেশা পরিচালনা করার কথা ছিল সেভাবে হচ্ছে না।’
আইন পেশার কথা উল্লেখ করে তিনি আইনজীবীদের উদ্দ্যেশ্য করে ভারতীয় নেতা মহাত্বা গান্ধী এবং বিশিষ্ট সলিসিটর জেনারেল ফার্লি নামেরীয় আত্মকাহিনীর বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন বক্তব্যে অরো বলেন, ‘আপনারা হলেন সমাজের বিবেকবান মানুষ, আইন পেশাকে রাজনীতিতে ব্যবহার করবেন না। আপনাদের দায়িত্বশীল কাজ করতে হবে, বর্তমানে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই- জাতীয় ও স্থানীয় বারের নির্বাচনে কে সভাপতি ও কে সেক্রেটারি হবেন এটা রাজনীতিবিদরা নির্ধারণ করে দেন। এমনটা হওয়ার কথা নয়।’
তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমাকে খুব বেশি পিড়া দেয়। অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিকে দিয়ে আমাদের দেশ আগের চেয়ে অনেক অগ্রসর হচ্ছে।’
তিনি সারা দেশের আইনজীবীদের আবেদন করে বলেন, ‘বিচারকদের সঙ্গে আপনাদের মনমালিন্য হলে আদালত বয়কট করবেন না। প্রয়োজনে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমাকে জানাবেন। আমি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে আপনারা আদালত বয়কট করবেন।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল মোছাব্বির এর সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম জাবেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মো. সফিকুল ইসলাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোতাহির আলী, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, মৌলভীবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এ কিউ এম নাছির উদ্দীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান মুজিব, অ্যাডভোকেট শান্তি পদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ।
দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘বিচারকরা ছুটি পেয়ে সরকারি খরচে বিদেশ চলে যান, অথচ পাঁচ-সাত বছরেও রায় লেখেন না। রায় লেখার জন্য আপনারা ৬-৯ মাস ছুটি ভোগ করে রায় লিখেন, দয়া করে অবসরে যাওয়ার পর রায় লিখবে না।’
বর্তমান বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে আর বলেন, ‘আপনারা দয়া করে আইন ভঙ্গ করবেন না। আপনারা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে সাধারণ মানুষজন কী করবে?’