বিএলআরআই-র প্রকল্প পরিচালক সামাদসহ কয়েকজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লীগের পরিচয় পিডি ও বর্তমান বিএনপির বেনারে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ কয়েকজন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় বিএনপির বড় নেতা বনে গেছেন। আওয়ামী স্বৈরশাসকের আমলে, ফ্যাসিবাদ দুর্নীতিবাজমন্ত্রী ও সচিবদের ম্যানেজ করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একই সাথে দুটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হন।
জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প’ এবং ‘বাংলাদেশে এর লক্ষ্য অর্জনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং জুনোসিস প্রতিরোধ প্রকল্প’ এই দুটি প্রকল্পের পিডি হয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন কিন্তু দুটি প্রকল্পে কোন কাজই হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ২৫টি প্রযুক্তি ও গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ছয়টি ভ্যাকসিন সিড উদ্ভাবনে গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তিনি এ প্রকল্প হতে কোন প্রযুক্তি বা ভ্যাকসিন সিড উদ্ভাবন করতে পারেননি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে তিনি এলসডি ও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার টীকা উদ্ভাবন করেছেন যা প্রকল্প শেষ হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষ এলসডির টীকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিলেও, অধিদপ্তর এ টীকা উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। প্রকল্পটিতে গবেষণা বাবদ ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এ প্রকল্পের অধীন কোন গবেষণার কাজই সমাপ্ত হয়নি বলে জানা গেছে এবং প্রকল্পের চলমান গবেষণার কাজ সমাপ্ত করার জন্য তিনি এ অর্থ-বছরে মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন এবং তা মহাপরিচালক প্রয়োজনীয় অর্থের অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি এ প্রকল্পের অধিকাংশ ব্যয় করেছেন রাসায়নিকদ্রব্য, গ্লাসওয়ার, প্লাস্টিক ইত্যাদি কনজোম অ্যাবল বস্তু যা খরচ দেখানো যায়।
প্রকৃতপক্ষে তিনি এগুলো না ক্রয় করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। এছাড়া তিনি নির্মাণ কাজে অনেক বেশী মনোযোগী ছিলেন যেখান থেকে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি প্রকল্পের গবেষণা না করে নির্মান কাজ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, রাসায়নিকদ্রব্য, গ্লাসওয়ার, প্লাস্টিক কনজোম, হ্যান্ডগ্লাভস, কাচের বাটি, প্লাস্টিকের চোঙা, প্লাস্টিকের ফিল্টার চোঙা, টিউব স্ট্রিপ ঢাকনাযুক্ত প্লাস্টিকের বোতলসহ ইত্যাদি ক্রয় করেছেন যাতে অর্থ আত্মসাতের সহজ উপায় ছিলো। বাংলাদেশে এর লক্ষ্য অর্জনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং জুনোসিস প্রতিরোধ প্রকল্পের অধীন মূলতঃ তিনি কোন কাজই করেননি।
বিএলআরআই এর রাজস্ব প্রকল্পের অর্থে বিভিন্ন সময়ে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং জুনোসিস প্রতিরোধ বিষয়ক বিভিন্ন শিরোনামে পরিচালিত গবেষণা সমূহের ফলাফলগুলোই “বাংলাদেশে এর লক্ষ্য অর্জনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং জুনোসিস প্রতিরোধ প্রকল্প” সমাপ্তের পর বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, সেমিনারে উপস্থাপন করতে দেখা গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও বৈদেশিক সহায়তায় সম্পূর্ণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএলআরআই’র এক কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে দুটি প্রকল্প হতে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রকল্প পরিচালক, ড. সামাদ মনসিংহের ভালুকায় ধীতপুর ইউনিয়নের পানিহাদি গ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন যে খামারটি বাংলাদেশে এর লক্ষ্য অর্জনে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এবং জুনোসিস প্রতিরোধ প্রকল্পের অধীন রেখে “এএমআর’র গুড ফার্মিং প্র্যাকটিস মডেল ডেভেলপমেন্ট” দেখিয়ে জনবলসহ সকল ব্যয় (খাদ্য, ভ্যাকসিন, মেডিসিন সহ সকল প্রকার ব্যয়) প্রকল্প থেকে করেছে অর্থাৎ তার ব্যক্তিগত খামার প্রকল্পের টাকায় পরিচালনা করেছে যা সম্পূর্ণরূপে চাকুরী শৃংখলা বহিভূর্ত ও অনৈতিক।
জানা যায়, ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদের দুটি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়ে ২৫ নভেম্বর, ২০২২ তারিখে যুগান্তর পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও ফ্যাসিবাদ স্বৈরশাসকের দুর্নীতিতে চ্যম্পিয়ন মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার দোসর বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালক, ড.এস.এম. জাহাঙ্গীর হোসেনের ছত্রছায়ায় ধামাচাপা পড়ে যায়। এই কর্মকর্তা ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের সম্পূর্ণ সময়ই বিদেশী বিভিন্ন প্রশিক্ষনসহ ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেছে। ফ্যাসিবাদ স্বৈরশাসনের সময়কালে সম্পূর্ণ সুযোগসুবিধা ভোগী বিএলআরআই-এর এই কর্মকর্তা ৫ই আগষ্টের পর তার রং পরিবর্তন করে বিএনপির বড় নেতার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে এবং নাম প্রকাশ না করার করার অনুরোধে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, তিনি বিভিন্ন সময়ে ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার মেজাজ খারাপ থাকলে কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের অকথ্যভাষায় গালাগালি করে থাকেন। অনেকের ধারণা তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন, একজন সাইকোপ্যাথ।
ড. রাকিবুল হাসান ও ড. সাদেক আহমেদ, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএলআরআই এ ২০০৬ সালে বিএনপির সময়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন এবং ৫ই আগষ্টের আগ পর্যন্ত তারা যথাসময়ে পদোন্নোতিসহ ইনস্টিটিউটের সকল সুবিধা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ভোগ করে আসছেন। তারা ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে ৫ আগষ্টের পর গুটিকয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়ে বিএনপির বড় নেতা বনে গেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি প্রশাসনের সাবেক ডিজির পক্ষেও আবার ডিজির প্রতিপক্ষ গ্রুপেও তালমিলিয়ে চলছেন। আরো জানা গেছে, ড. রাকিবুল হাসান, এখনও স্বৈরশাসকের দোসর সাবেক ডিজি ও ডাইরেক্টর আশির্বাদে দুটি দায়িত্ব পালন করে আসছে একটি ডেইরি রিসার্স সেন্টার ও প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি পরিক্ষণ বিভাগ।
ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) তারা চাকুরিতে যোগদান করার পর থেকে ইনস্টিটিউটের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা ভোগ করা সত্বেও হঠাৎ করে বিএনপির নেতার পরিচয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। ড. সাদেক আহমেদের ফ্যাসিবাদ স্বৈরশাসকের দলীয় বিবেচনা এবং প্রচুর অর্থের বিনিময়ে’ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্পের পিডি নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এই প্রকল্পের পিডি চতুর্থ গ্রেডের একজন কর্মকর্তার হওয়ার কথা থাকলেও ড. সাদেক আহমেদ দলীয় পরিচয়ে ও প্রচুর অর্থের বিনিময়ে ঐ সময়ে একজন ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হয়ে পিডি নিয়োগ নেন।
গত বছর শেষ হয়েছে বিএলআরআইর ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প যেখানে ব্যাপক অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে যা স্বৈরশাসকের মন্ত্রীকে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এবং স্বৈরশাসকের সাবেক মহাপরিচালকের সহযোগীতায় সে প্রকল্পটি প্রচুর অডিট আপত্তি রেখে শেষ হয়েছে বলে জানা যায়। তার স্ত্রী নুসরাত জাহান সুমি ফ্যাসিবাদ স্বৈরশাসকের সময়েই প্রথমে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগদান করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি এবং গত ২৪/১/২০২৪ ইং তারিখে তিনি মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এবং স্বৈরশাসকের আমলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। তারপরও ৫/১০/২০২৪ তারিখের পর তারা সবাই এখন বিএনপি দলীয় পরিচয়ে ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন পদ পদবি পাওয়ার লোভে ইনস্টিটিউটির কর্ম পরিবেশ নষ্ট করে চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ড. রাকিবুল হাসান ও ড. সাদেক আহমেদ, দীর্ঘদিন ধরে বিএলআরআই-এর অফিসার্স ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারির ও আর সভাপতির পদে আছেন।