বিএনপি ২৫ অক্টোবরের পর অসহযোগ আন্দোলনে যাবে

14/10/2013 7:13 pmViews: 15

bnp-শরীফুল ইসলাম ॥ ২৫ অক্টোবরের পর সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ আন্দোলনকে সর্বজনীন করতে সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি পেশাজীবীদের আন্দোলনে শরিক করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ঈদের পর পেশাজীবীদের মাঠে নামাচ্ছে বিএনপি। ২০ অক্টোবর থেকে পেশাজীবীদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সিরিজ কর্মসূচী পালন করবেন। এ কর্মসূচীর মধ্য দিয়েই রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানাবেন খালেদা জিয়া।
জানা যায়, ২৫ অক্টোবর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ঢাকায় জনসভা করবে। এ জনসভা থেকে খালেদা জিয়া লাগাতার হরতাল-অবরোধসহ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করবেন। ইতোমধ্যেই এ জনসভাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সমাবেশ সফল করতে রাজধানীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যৌথসভা করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ২৫ অক্টোবর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু হবে, তা সফল করতে ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নপর্যায়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতিসভা করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক চলছে। আর পেশাজীবীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী শুরু হচ্ছে ২০ অক্টোবর থেকে।
জানা যায়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই পেশাজীবীদের মাঠে নামাচ্ছে বিএনপি। ঈদের পর নিজেদের দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সরকারের ওপর চাপপ্রয়োগ করতে রাজধানীতে পেশাজীবী সংগঠনগুলো সমাবেশ করবে। এ সব সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ১৮ দলীয় জোটের অন্য শীর্ষ নেতারাও থাকবেন। একই সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের কর্মসূচীর সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করে আটঘাট বেধে দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে পড়বেন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, আন্দোলনকে সর্বজনীন করতেই পেশাজীবীদের মাঠে নামানোর কৌশল নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশে এ যাবতকালে বড় বড় যত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে তাতে পেশাজীবীদের একটা ভূমিকা ছিল। রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি পেশাজীবীরা আন্দোলনে অংশ নিলে এ আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ে এবং দ্রুত গতিশীল হয়। ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে দ্রুত সফলতা এসেছে। তাই ২৫ অক্টোবরের পর যে আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে তাতে পেশাজীবীদের সামিল করা হচ্ছে।
২০১১ সালে আদালতের এক রায়ের পর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। অবশেষে সে বছর ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়। এর পর থেকে এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। ১৮ দলীয় জোটের প্রতিটি শরিক দলকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হয়। এ দাবি আদায়ে ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে সারাদেশে রোডমার্চ কর্মসূচী পালন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ ছাড়া ঢাকায় সমাবেশ করে দফায় দফায় সরকারকে আল্টিমেটামও দেন তিনি। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করা সম্ভব হয়নি।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ বছর ৮ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন জেলায় জনসভা কর্মসূচী শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদীর পর ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী, ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনা ও ৫ অক্টোবর সিলেটে জনসভা করেন খালেদা জিয়া। এ সব জনসভায় ২৪ অক্টোবরের মধ্যে নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে ২৫ অক্টোবর থেকে লাগাতার কঠোর আন্দোলন শুরু করে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেন। এরই অংশ হিসেবে ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।
বিভিন্ন জেলার জনসভায় খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, হয় নির্বাচন, না হয় রাজপথে আপনাদের সঙ্গে আবারও দেখা হবে। যদি প্রয়োজন হয় আপনারা ঢাকায় চলে আসবেন। আমরা ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেখব সরকার কী করে। তার পর আপনাদের বলব, কী করতে হবে।
পেশাজীবীদের আন্দোলনে শরিক করার অংশ হিসেবে ঈদের পর প্রথমেই ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ জাতীয় কনভেনশন করবে। এই কনভেনশনে প্রধান অতিথি থাকছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কনভেনশনে চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আইনজীবী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ও এনজিও প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। কনভেনশন সফল করতে আয়োজকদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতি ও প্রচার শুরু করে দিয়েছেন।
জানা যায়, পেশাজীবী পরিষদের পর ২৪ অক্টোবর বিএনপি সমর্থক শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট, ২৬ অক্টোবর বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকায় সমাবেশ করবে। এ ছাড়া চিকিৎসক, কৃষিবিদ ও প্রকৌশলীসহ কয়েকটি পেশাজীবী সংগঠন অনুরূপ সমাবেশ করবে। এ সব সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন খালেদা জিয়া।
এর আগে গত সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপিপন্থী চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষিবিদ প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খালেদা জিয়া। এতে তিনি আগামী দিনে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচীতে অংশ নেয়ার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান। সে সময় বিএনপিপন্থী এ সব পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা নির্দলীয় সরকারের দাবিতে মাঠে থাকবেন বলে খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশের মানুষের এখন একটিই দাবি, তা হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু সরকার এ দাবি আমলে না নিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আবারও ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। এ কারণে দেশের মানুষ এখন ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ অক্টোবর থেকে বিএনপি আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছে। এ আন্দোলন হবে ভয়ঙ্কর। লাগাতার হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে এ আন্দোলন চলবে। পেশাজীবীরাও মাঠে নামবেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ পেশাসংশ্লিষ্ট কিছু দাবিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০ অক্টোবর পেশাজীবী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে আন্দোলনের নতুন ঘোষণা আসবে। এ কর্মসূচী সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সর্বস্তরের পেশাজীবীরা এ কনভেনশনে অংশ নেবেন।
রবিবার নয়াপল্টনের বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২৫ অক্টোবর থেকে আমাদের কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ আন্দোলন ঠেকাতে কিলিং স্কোয়াড গঠন করছে। আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পাচ্ছি, বিরোধী দলের আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরকারের অনুগত উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে টর্চার সেল গঠন করছে। এটি পরে নাকি কিলিং স্কোয়াডে পরিণত করা হতে পারে।

Leave a Reply