বিএনপি বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির বিষবৃক্ষ’ রোপণ করে গেছে : প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির বিষবৃক্ষ’ রোপণ করে গেছে : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিগত বিএনপি সরকার দুর্নীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করে গেছে এবং বাংলাদেশ এখন তার ফল ভোগ করছে। গ্রেনেড হামলার ১৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির কাছে ক্ষমতা হলো দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামানোর উপায় এবং দেশ এখন তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসন কালে রোপণ করা বিষবৃক্ষের মূল্য দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার একের পর এক দুর্নীতি এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে বর্বর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার জন্য বিএনপি জামায়াত জোটকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘(সত্যিকারেই) হত্যাকাণ্ড বিএনপির অভ্যাস, তারা দেশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।’
২০০৪ সালের নৃশংস গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন সংসদে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া সংসদ নেতা হয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে কে মারবে। সে কথা স্মরণ করে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনিই তো মারবেন। চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দেশে এই রকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আমি বিরোধী দলের নেতা, আমার ওপর এমন একটা গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি দল, যে দল দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই দলের একটা সভায় এমন একটা গ্রেনেড হামলা, আর পার্লামেন্টে যিনি সংসদ নেতা, লিডার অব দ্য হাউস, প্রধানমন্ত্রী, সে দাঁড়িয়ে বলে দিল, ‘ওনাকে আবার কে মারবে’।
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো বলতে হয় যে আপনিই মারবেন। চেষ্টা করেছেন, ব্যর্থ হয়েছেন, সেই জন্য আর পারছেন না। সেদিন এ রকম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলে আমাদের কোনো কথা বলতে দেয়নি এ হামলা সম্পর্কে। অথচ আমাদের নেতা-কর্মীরা, পার্লামেন্ট মেম্বাররা (তখন) আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।’ ২০০৪ সালে সংসদে কথা বলতে না দেওয়া প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর থেকে কী প্রমাণ হয়? তারা যদি সরাসরি জড়িত না থাকবে, তাহলে কি এই রকমভাবে বাধা দিত?’ বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে একেকটা ঘটনা ঘটার আগে খালেদা জিয়া বক্তৃতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেমন কোটালিপাড়ায় যে বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল, তার আগে বলেছিলেন যে আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে বলেছেন, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবেন না। এই ভবিষ্যদ্বাণী খালেদা জিয়া কীভাবে দিয়েছিলেন? কারণ, তাদের চক্রান্তই ছিল যে আমাকে হত্যা করে ফেলবে। তাহলে তো আমি কিছুই হতে পারব না।’
২১ আগস্টের দিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে মানবঢাল তৈরি করে রক্ষা করেছিলেন। সে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘আল্লাহই বোধ হয় আমাকে হাতে তুলে বাঁচিয়েছেন, যেটা আমার নেতা-কর্মীরা মানবঢাল তৈরি করেছিল।’ সে সময় তৎকালীন সরকার আলামত নষ্ট করেছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকার যদি এর সঙ্গে জড়িত নাই থাকবে, তাহলে তারা আলামতগুলো কেন নষ্ট করবে। একটি অক্ষত গ্রেনেড এক সেনা কর্মকর্তা আলামত হিসেবে রাখতে চাওয়ায় খালেদা জিয়া তাকে চাকরিচ্যুত করে।’ তখন পুলিশ, চিকিৎসকসহ অনেকেই উদ্ধার বা সহায়তায় এগিয়ে আসেনি বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের মদদ না থাকলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হতে পারে না। তাদের ধারণা ছিল আমি মারা গেছি। যখন জানল মারা যাইনি, সেই রাতে চারজনকে দেশ থেকে পালাতে সুযোগ করে দেয়। আসলে খুন করাই তাদের অভ্যাস। এরা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।’
১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় খন্দকার মোশতাকের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানও জড়িত। সেই জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াই ক্ষমতায় এসে ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটান এবং তার সঙ্গে তার ছেলে তারেক রহমান যে জড়িত, তা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের কথায় বেরিয়ে এসেছে।’ প্রধানমন্ত্রী ২০০৪ সালে নিহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আহত যারা হয়েছেন, তাদের কথাও স্মরণ করেন। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের এ সংক্রমণের সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালনা করতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছেলে এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে খুব দুঃখ যে আমি আপনাদের মাঝে আসতে পারলাম না এই জায়গায়। যাই হোক, এটা রাষ্ট্রীয় একটা বিষয় থেকে এই সমস্যা। কিন্তু আজকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আপনাদের সাথে কথা বলতে পারছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আমি জয়কে ফোন করেছিলাম। তাকে ধন্যবাদও দিয়েছি যে তুমি যদি ডিজিটাল পদ্ধতি না করে দিতে তাহলে আজকে এভাবে আমরা আমাদের এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পারতাম না। সবকিছু স্থবির হয়ে থাকত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানেই (২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা) তারা ক্ষান্ত হয়নি। আমেরিকায় সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার ছেলেকে কিডন্যাপ করে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। সেখানে ধরা পড়লো কার কাছে। আমেরিকার যে সংস্থা এফবিআই। তাদেরই তদন্তে এটা বের হয়। তারাই যখন এটা তদন্ত করে সেখানে বিএনপির নেতা দোষী সাব্যস্ত হয় এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়। ’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সেখানে যে রায় দেয় বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান এবং শফিক রেহমান তাদের নাম বেরিয়ে এসেছে যে, তারা এর সঙ্গে জড়িত। যে শাস্তি পায় সে তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে এই ঘটনা ঘটিয়েছিল, জয়কে যে হত্যা (চেষ্টা) করবে এটা আমরা কখনো জানতে পারতাম না যদি এফবিআই এটা খুঁজে বের না করতো। ’
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভ্য দেশ হলে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এবং অন্যরা ছুটে আসত আহতদের উদ্ধার করতে। তাদের হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেত এবং চিকিৎসা করাত। কিন্তু এখানে কী হলো আমাদের উদ্ধারকারী নেতাকর্মীদের উপর উল্টো লাঠি চার্জ এবং টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সেদিন বন্ধ ছিল। আহত লোকজন প্রবেশ ও চিকিৎসা নিতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বিএনপির চিকিৎসকরা একজনও ছিল না। যাদের ডিউটি ছিল তারাও সেখানে উপস্থিত ছিল না। আমাদের যারা ডাক্তার ছিলেন তারা সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। তিনি বলেন, জাতি জানতে চায় গ্রেনেড হামলায় আহতদের উদ্ধার না করে উল্টো পুলিশ কেন লাঠিচার্জ এবং টিয়ার শেল মারল সে প্রশ্নের জবাব। হামলায় আহত আপন লোককে যখন তুলতে গেছে পুলিশ তখন তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। কেন তারা সাহায্য করল না। হামলাকারীরা যাতে নির্বিঘ্নে ওই জায়গা ত্যাগ করতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করবার জন্যই তারা এটা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা সঙ্কটকালে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ধান কাটার সময় তারা ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এখনো ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে এই ত্রাণ দিতে গিয়ে দলের অনেক নেতাকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। করোনার সময় পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনের সবাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, আর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি? করোনার কারণে আজ আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকতে পারলাম না এজন্য বড় দুঃখ। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করেছে। তার স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তার স্বপ্ন পূরণে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করোনায় সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বে¡ও আমরা অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখছি। দেশটা যেন আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারি সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা ক্ষুধা এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো এটাই হলো প্রতিজ্ঞা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকসহ দলের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় কার্যালয়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ২১ আগস্টের হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণীসহ ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের অনেকেই সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতারা কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পান।