বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাদণ্ড

09/10/2013 11:42 amViews: 11

alim
প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চারিট অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করেন।

একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং এসব অপরাধে উস্কানি ও সহযোগিতার অভিযোগে ১৭টি অভিযোগ আনা হয় আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে নয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বাকী অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে পারেনি রাষ্টপক্ষ।

এর মধ্যে ২, ৮, ১০ ও ১৪নং অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ডর দেয়া হয়। রায়ে আদালত বলেছেন, অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যেতে পারে। কিন্তু তার বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলো।

বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে এটি দ্বিতীয় মামলার রায়। এর আগে সর্বশেষ ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ের চূড়ান্ত অংশ পড়া শেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। ১৯১ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া।

এর আগে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতি বুধবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে আসেন।ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, সম্পূর্ণ রায় না পড়ে মনগড়া মন্তব্য করবেন না।এটা আইনের শাসনের জন্য ক্ষতিকর।

বুধবার সকালে একটি সাদা রংয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে আবদুল আলীমকে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। এরপর আলীমকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় তার পরনে ছিল সাদা লুঙ্গি ও ফতুয়া। এরপর সেখান থেকে হুইল চেয়ারে করেই আলীমকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসা হয়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। ওইদিন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২-এ আলীমের বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। সেসময় বলা হয়, যেকোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

ট্রাইব্যুনাল আলীমের জামিন বহাল রাখার আবেদন বাতিল করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এ পর্যন্ত সাতটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-২ এ নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। এর মধ্যে চারটির রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

আলীমকে ২০১১ সালের ২৭ মার্চ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জয়পুরহাটের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ৩১ মার্চ শারীরিক অবস্থার কারণে তাকে জামিন দেয় ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছরের ২৭ মার্চ আলীমের বিরুদ্ধে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ আমলে নেয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ১৬ এপ্রিল মামলা ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ১১ জুন ট্রাইব্যুনাল-২ আলীমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে গণহত্যার তিনটি অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো, জয়পুরহাটের কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩৭০ জন হিন্দু হত্যা, উত্তর হাটশহরে নয়জনকে এবং জয়পুরহাট চিনিকলে বিচার বসিয়ে ২৫ জনকে হত্যা। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে হত্যার ১০টি এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার একটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এ মামলায় গত বছরের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় এবং ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় চলতি বছরের ২২ আগস্ট। আসামিপক্ষের তিন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় ২৭ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। রাষ্ট্রপক্ষ ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চার কার্যদিবস এবং আসামিপক্ষ ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ কার্যদিবস যুক্তি উপত্থাপন করে। ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আইনগত যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়টি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখে ট্রাইব্যুনাল-২।

ট্রাইব্যুনাল-২ ইতিপূর্বে চারটি মামলার রায় দিয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন, ৯ মে দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও ১৭ জুলাই সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এর মধ্যে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের নিষ্পত্তিও হয়ে গেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগ ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়।
f

Leave a Reply