বিএনপি না এলে জামায়াত বাদে অন্যান্য দল নিয়ে সর্বদলীয় সরকার
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি না এলে জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলো নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের এ কথা বলেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে আলোচনা হচ্ছে।
প্রথম দিনে সিপিবি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আজ সিপিবি নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। পরে বাসদ, গণফোরাম ও অন্য দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন। তাদের নিয়ে গঠিত সর্বদলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা ভাবছে সরকার। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। সে হিসেবে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পর কোন কোন আসনে উপনির্বাচন সম্পন্ন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ উপনির্বাচন সম্পন্ন করে আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে যাতে নতুন সরকার গঠনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সে লক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা জরুরী।
অনির্ধারিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। দেশবাসীকে সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করতে নিজে টেলিফোন করেছি। এমনকি সংঘাত যাতে না হয়, সে জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে হরতাল প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসারও অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি হরতাল প্রত্যাহার করেননি। এই হরতালে একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর এই হামলার প্রতিরোধ গড়ে তুলত হবে। এ সময় তিনি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনের আলাপচারিতার কিছু অংশ উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
এদিকে খুলনায় দেশের পঞ্চম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী খুলনা সফরের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলেন। নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর এখান থেকে পাস করে শিক্ষার্থীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় মাঠ পর্যায়ে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া সরকার মনোনীত দুজন কৃষি উদ্যোক্তা এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটে সদস্য হিসেবে থাকবেন।
বর্তমানে ময়মনসিংহ, গাজীপুর, ঢাকা ও সিলেটে চারটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেই হিসাবে খুলনায় হবে দেশের পঞ্চম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। খুলনায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন-২০১৩’ এবং ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধন) আইন-২০১৩’ খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। গত ২ সেপ্টেম্বর এ দুটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
পাশাপাশি বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩-এর খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিবেচিত বিষয়ের (এজেন্ডা) তালিকা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রস্তাবটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। বৈঠকে সরকারী-বেসরকারী অংশীদারি আইন- ২০১৩ অনুমোদনের খসড়া প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ প্রস্তাবের খসড়া উত্থাপিত হয়। খসড়ায় কী ভাবে বেসরকারী অংশীদার নির্বাচন করা হবে, চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে তা তুলে ধরা হয়। এ ছাড়াও বৈঠকে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডেভেলপমেন্ট অব স্ট্যাটিসটিক (এনএসডিএস) শীর্ষক পরিকল্পনার দলিল অনুমোদন করা হয়।