বিএনপির বিশ্বাস , কর্মীরাই ‘একদলীয়’ নির্বাচন ঠেকিয়ে দেবে

22/09/2013 6:19 pmViews: 12

523f28ec28d14-BNP-Logoবিএনপির কাছে সংলাপ বা কূটনৈতিক তত্পরতায় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য সমাধানের আশা ফিকে হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত রাজপথেই তাঁদের নামতে হবে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তবে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত আন্দোলনের কোনো রূপরেখা তাঁদের হাতে নেই।বিএনপির নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করতে গেলে তৃণমূলে তা ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়বে। বিএনপি ও জামায়াত-অধ্যুষিত অনেক এলাকায় নির্বাচনও করতে পারবে না সরকার। কর্মীদের সাহায্যে এসব অঞ্চল তাঁরা বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারবেন।কারণ বিএনপির নেতাদের বিশ্বাস, তৃণমূলে কোন্দল থাকলেও একদলীয় নির্বাচন প্রতিহত করতে কর্মীরা নিজেদের স্বার্থেই মাঠে নামবেন। দীর্ঘ প্রায় সাত বছর ধরে দল ক্ষমতার বাইরে। ফলে কর্মীরাও অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উল্টো নানা ধরনের হামলা-মামলায় জর্জরিত। সেটি আরও বাড়ুক, এটা কর্মীরা কখনো চাইবেন না।নেতারা মনে করছেন, প্রশাসন ও পুলিশের ওপর সে সময় সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতটা তত্পর, ঢাকার বাইরে ততটা নয়। ঢাকার মতো এত পরিমাণ সদস্য মোতায়েনও সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের কর্মীরাও অনেকে ধরে নিয়েছেন, ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। তাই যতটুকু সক্রিয় থাকার কথা, ততটুকু তাঁরা থাকবেন না। তা ছাড়া পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক অবস্থানও সুদৃঢ় নয় বলে বিএনপির নেতারা মনে করছেন।

এর পরও সরকার একদলীয় নির্বাচন করলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। দাবি জোরালো করতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিভাগীয় শহরগুলোতে জনসভা করছেন। কুরবানির ঈদের পর অক্টোবরের শেষ দিকে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তা আছে। সেখান থেকে ‘ঢাকা অচল’ ‘অসহযোগ’, কয়েক দিনের লাগাতার হরতাল-অবরোধ আসতে পারে বলে দলের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন। তাতে দাবি আদায় না হলে বিএনপি ‘একদলীয়’ নির্বাচন প্রতিহত করার দিকে যাবে।

বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন, কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হতে চলেছে। এটি ব্যর্থ হলে রাজপথে দাবি আদায়ও অনেকটা কঠিন হবে। শেষ পর্যন্ত একদলীয় নির্বাচন হলে বিএনপিকে তা প্রতিহত করতে হবে।

বিএনপি মনে করছে, তাদের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরেরও পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। দীর্ঘদিন থেকে তারা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে লড়ে আসছে। বিএনপিও মাঠে নামলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আরও সাহসী হবেন। হেফাজতে ইসলামও সরকারের ওপর চরম ক্ষিপ্ত। এসবের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য বলেন, ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার তুলনা করলে হবে না। এলাকায় চিত্র ভিন্ন। বিএনপি-জামায়াতের হরতালগুলোতে তা টের পাওয়া যায়।

উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর বগুড়া, সাতক্ষীরা অঞ্চলে যে অবস্থা হয়েছিল, একতরফা নির্বাচনে গেলে বিএনপি ও জামায়াত-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব না’—বিএনপি এ ঘোষণা দিলেই যথেষ্ট। বিভিন্ন গোষ্ঠী আছে, সুযোগ তারা নেবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সাধারণ মানুষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন হবে, তা মানুষ বিশ্বাস করে না। তাই নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি ও ১৮ দলের কর্মসূচিতে মানুষ আস্থা রাখছে। আওয়ামী লীগ যদি একদলীয় নির্বাচন করে, তা প্রতিহত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ঢাকার চেয়ে তৃণমূল বেশি অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির আন্দোলন করার সামর্থ্য নেই। আওয়ামী লীগ কোনো ধারণা করতে পারছে না। হয়তো দেখা যাবে ঢাকা শান্ত, দূরবর্তী (রিমোট) এলাকাগুলো অশান্ত।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, একতরফা নির্বাচন করতে গেলে জনগণই তা প্রতিহত করবে। সরকারি দলের ৯৭ ভাগ সাংসদ অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। নির্বাচনে মানুষ বিএনপিকে ভোট দিয়ে তাঁদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন। তাই বিএনপির কর্মীরাও মনে করছেন ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত। কিন্তু বিএনপির যদি প্রার্থীই না থাকে তাহলে ভোট দেওয়ার জায়গা থাকবে না। যখন তাঁদের ভোট দেওয়ার জায়গা থাকবে না, তখন তাঁদের হতাশা-ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ অন্যভাবে হবে।

Leave a Reply