বিএনপির প্রতি তথ্যমন্ত্রী জনগণের কথা বলুন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যে নিজেদের আটকে রাখবেন না
বিএনপির প্রতি তথ্যমন্ত্রী
জনগণের কথা বলুন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যে নিজেদের আটকে রাখবেন না
বিএনপিকে আওয়ামী লীগের গঠনমূলক সমালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘আপনারা অবশ্যই আমাদের সমালোচনা করবেন। দয়া করে অজ্ঞের মতো, অন্ধের মতো সমালোচনা করবেন না। আপনারা নিজেদের রাজনীতি খালেদা জিয়ার হাঁটু ও কোমরব্যথা থেকে মুক্ত করে গণমুখী করুন। জনগণের কথা বলুন। শুধু খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং তারেক রহমানের মামলার মধ্যে আটকে রাখবেন না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এসব মন্তব্য করেন। আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।
আজ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাংসদ মাহফুজুর রহমান, ওয়াশিকা আয়েশা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের প্রশংসা করেন। প্রশংসা করতে পারে না কেবল একটি পক্ষ। তারা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ও ঐক্যফ্রন্ট। তাদের রাজনীতিটা খালেদা জিয়ার অসুস্থতার মধ্যে আটকে আছে। আসলে খালেদার অসুস্থতার মধ্যে বিএনপির রাজনীতি ঘুরপাক খাচ্ছে। খালেদা জিয়াকে আজকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এত দিন বলে আসছেন, খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। কোনো অবস্থাতে বিএসএমএমইউতে নেওয়া যাবে না। অথচ এক মাস ধরে খালেদা জিয়ার জন্য বিএসএমএমইউয়ে দুটি কেবিন বরাদ্দ করে রাখা হয়েছিল। তিনিও (খালেদা) সেখানে যাবেন না বলে বলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আজ সেখানে গেলেন।’বিএসএমএমইউয়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গাধা জল ঘোলা করে খায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও কথা ঘুরিয়ে দিয়ে এখন বলছেন বিএসএমএমইউতে যেন খালেদা জিয়ার ভালো চিকিৎসা হয়। কিন্তু আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখন তাঁকে ইউনাইটেড বা স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাঁর বাসা থেকে স্কয়ার হাসপাতাল অতিক্রম করে বিএসএমএমইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে যে তাঁর বিশ্বমানের চিকিৎসা হয়েছে, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে আসা চিকিৎসক দলের সদস্যরা বলেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া নাকি সেখানে যাবেন না। শেষ পর্যন্ত তিনি গেলেন। অর্থাৎ, গাধা যে জল ঘোলা করে খায়, সেটা আবার প্রমাণ করেছে বিএনপি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সব ধরেন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন সোনার বাংলার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন আন্তর্জাতিক চক্র ও দেশীয় পরাজিত অপশক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়, তখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আমরা মাত্র দুই বছর আগে ৭ দশমিক ৪ প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করতে পেরেছি। রাষ্ট্রের ৪৫ বছরের পথচলায় বঙ্গবন্ধু অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে আমরা সেটা ছুঁতে পেরেছি। যদি সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারতেন, তাহলে মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক আগেই বাংলাদেশ হতো একটি উন্নত রাষ্ট্র।’
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমরা যখন স্বাধীনতা অর্জন করি, তখন মালয়েশিয়া ছিল পশ্চাৎপদ একটি রাষ্ট্র। মালয়েশিয়ার ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমনকি চট্টগ্রাম মেডিকেলে পড়তে আসতেন। দক্ষিণ কোরিয়া আমাদের চেয়ে পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র ছিল। এই দেশটিও আমাদের অতিক্রম করে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে তাদের আগেই বাংলাদেশ হতো উন্নত রাষ্ট্র। আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের মধ্যে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর প্রথম পাঁচটি উচ্চ প্রবৃদ্ধি যারা ধরে রাখতে পেরেছে, সেই দেশগুলোর একটি। আজ বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৯০ ডলার, যা পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের কাছাকাছি আমরা। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ভারতকে অতিক্রম করব। আমাদের গড় আয় ও আয়ু বেড়েছে। সব অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্য সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। এ জন্য পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরা বলেন, আমাদের সুইডেনের স্বপ্ন দেখাবেন না। ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বানানোর চেষ্টা করুন।’
সংবর্ধনার জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই পদক আমার একার নয়। এই পদকের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সব মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান দিয়েছেন।’
মোশাররফ হোসেন স্বাধীনতা পদকের সঙ্গে পাওয়া তিন লাখ টাকার সঙ্গে আরও সাত লাখ টাকা দিয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের স্কুলের জন্য দান করার ঘোষণা দেন। তিনি চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের একাত্তরের ভূমিকার জন্য শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। বর্তমান আওয়ামী লীগের যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাব।’