বাধা এলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় নির্বাচন করা হবে: সিইসি
প্রতিবেদক : সরকারের তরফ থেকে যে কোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রতিহত করার পাল্টাপাল্টি ঘোষণার পর এ প্রেক্ষাপটে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গতকাল রবিবার সাংবাদিকদের সিইসি বলেছেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের বাধা এলে জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আগামী সংসদ নির্বাচন করা হবে। বিএনপি কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে এমন অবস্থায় ইসি কিভাবে নির্বাচন করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, কোনো দল অংশ না নিয়ে নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইলে বা বাধা দিলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নির্বাচন করা হবে।
পরবর্তী প্রশ্নে আবার সমঝোতার আশা প্রকাশ করে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক অভিজ্ঞ নেতা রয়েছে। তারা শহরে না থেকে গ্রামে থাকেন। কাজেই তারা জনগণের পালস ভালো বোঝেন। তারা জানেন কিভাবে সঙ্কট নিরসন করতে হবে। আমরা আশা করি বড় দুটি দল বা গোষ্ঠী একটি সিদ্ধান্তে আসবে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে সহযোগিতা করবে। যদি সমঝোতা না হয় এবং বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন করতে হয়, তাহলে অন্যান্য দেশের নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের নজির আছে। আমাদের সেভাবেই নির্বাচন করব। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ও জনগণকে যাতে ভয়ভীতিতে না পড়তে হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। অবাধে কেন্দ্রে গিয়ে যাতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে কঠোর নজর রাখবে ইসি।
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখেও অনেক দেশে নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে। তবে সেই দেশে একটি ঐতিহ্য রয়েছে যা আমাদের দেশে নেই। আশা করি গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে কোন পদ্ধতির সরকারের অধীন নির্বাচন হবে এটা আচরণবিধি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সমঝোতা না হলে নির্বাচন করা কঠিন হবে। তারপরও নির্বাচন করতে হবে।
রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিদের প্রটোকল এবং ক্ষমতা থাকলে নির্বাচনে তা অপব্যবহার হবে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংবিধান, রুলস অব বিজনেস ও আচরণবিধি একই সঙ্গে কার্যকর থেকে নির্বাচন হয়। আমরা বিভিন্ন দেশের আচরণবিধি নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। সরকারি ও বিরোধী সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করে আচরণবিধি সংশোধন করা হবে। তফসিল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টেকনিক্যালি সব দিক দিয়ে প্রস্তুত। তফসিলের আগে যথাসময় আচরণবিধি তৈরি করা হবে। নির্বাচনের পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করা হবে।
কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছলে বর্তমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও আচরণবিধি দিয়েই নির্বাচন করা যাবে। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে আচরণবিধিতে বেশ পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে যা যা করা দরকার তাই করা হবে। এজন্য ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন থেকে রেফারেন্স নেয়া হবে। শেষ মুহূর্তে সমঝোতা হলেও কোনো অসুবিধা নেই। আমরা সব কাজের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি