বাণিজ্যমেলায় উপচেপড়া ভিড় প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে বিক্রি
বাণিজ্যমেলায় উপচেপড়া ভিড় প্রত্যাশা ছাড়িয়েছে বিক্রি
অর্ধেক সময় পার করেছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এরই মধ্যে জমজমাট হয়ে উঠেছে মেলা। বেচাকেনাও হচ্ছে আশানুরূপ। গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার ১৫তম দিন। মেলা ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই মেলায় প্রবেশ গেটে চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন। বিকাল বেলায় তা মানবজটে
পরিণত হয়। পার্কিং স্পেসসহ আশপাশের স্থানগুলো ভরে ওঠে কানায় কানায়। এমনকি সন্ধ্যায় মেলা ছাড়াও আশপাশের কোথাও খালি জায়গা ছিল না। গাড়ি রাখারও জায়গা হয়নি গতকাল। মেলা ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ স্টল-প্যাভিলিয়নেই প্রচুর ক্রেতাসমাগম। খোলা জায়গাগুলোতেও চোখে পড়ে মানুষের ভিড়। বিশেষ করে গৃহস্থালি পণ্য, ক্রোকারিজ, ইলেক্ট্রিক, ইলেক্ট্রনিক্স, সিরামিক ও বিভিন্ন কাপড়ের পণ্যের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি ভিড়। এসব প্যাভিলিয়নে শোভা পাচ্ছে স্ব-স্ব কোম্পানির নজরকাড়া সব পণ্য। মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ভারি পণ্য থেকে শুরু করে একেবারে ছোট পণ্যটি একসঙ্গে পেয়ে ক্রেতারাও বেজায় খুশি। এদিন মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ও বেচাকেনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও মেলায় অংশ নেয়া কোম্পানিগুলো।
বিক্রেতারা জানান, এ বছর মেলা খুব ভালোভাবে হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। মেলার প্রথমদিকে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি মোটামুটি থাকলেও বেচাবিক্রি তেমন হয়নি। তবে মেলার ১০ দিন পর থেকে ভালো বেচাবিক্রি হয়েছে। আর গতকাল শুক্রবার বেচাবিক্রিতে আমাদের ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, মেলার বাকি দিনগুলোতে এ ধারা অব্যাহত থাকলে মেলায় অংশ নেয়া সব কোম্পানির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব রেজাউল করিম জানান, মেলা মানে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলন মেলা। আর আন্তর্জাতিক এ মেলার আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে শুধু মেলা নয়, একই ছাদের নিচে পছন্দের পণ্য কেনাকাটা, বিনোদন, যান্ত্রিক শহরের মধ্যে নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোসহ সব ধরনের সেবা পাওয়ার কারণে মেলায় আকর্ষণ আরও বেশি। এ কারণে ছুটির দিনে সারা সপ্তাহ যারা ব্যস্ত থাকেন তারাও ছুটে এসেছেন। সব মিলে ২১তম বাণিজ্যমেলা গতকাল আন্তর্জাতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
মেলায় অংশ নেয়া সনি র্যাংগস প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ সারোয়ার জাহান চৌধুরী জানান, ছুটির দিনসহ সব শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় সব সময় হয়ে থাকে। তবে আজকের (গতকাল শুক্রবার) এ দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আজ শুধু উপস্থিতি নয়, আশানুরূপ বিক্রিও হচ্ছে। মেলার অর্ধেক সময় এসে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ব্যবসায়ীদের আশা জাগিয়েছে। এভাবে মেলার বাকি দিনগুলো থাকলে সব কোম্পানির টার্গেট পূরণ হবে।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ আকরামুজ্জামান অপু জানান, গত বছরের চেয়ে এবার মেলার অবস্থা খুবই ভালো। এবার রাজনৈতিক কোন অস্থিরতা না থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে সবকিছু হচ্ছে। মেলার প্রথম দিন থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভালো সাড়া পেয়েছি। তবে মেলার যত দিন বাড়ছে ক্রেতাদের সাড়া আরও বেশি মিলছে। তিনি বলেন, ওয়ালটন দেশীয় ব্র্যান্ড হওয়ায় এ প্যাভিলিয়নে মানুষের একটা আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এজন্যই প্রচুর মানুষ মেলার শুরু থেকেই এখানে আসছেন। প্রতিদিনই প্যাভিলিয়নে প্রচুর দর্শনার্থী এলইডি টিভি, ফ্রিজ ও মোটরসাইকেলসহ গৃহস্থালি পণ্য দেখতে এলেও তারা ফ্রিজ ও মোবাইল ফোন বেশি কিনছেন।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তারা জানান, মেলার শুরুতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মাঝে সাড়া ফেলেছে তাদের প্যাভিলিয়ন। ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে এনার্জি সেভিং ও পরিবেশবান্ধব উচ্চ প্রযুক্তির এলইডি বাল্ব ও সিলড লিড এসিড রিচার্জেবল ব্যাটারি। হট কেকে পরিণত হয়েছে ওয়ালটনের নতুন ডোনাট মেকার, স্যান্ডউইচ মেকার, কেক মেকার ও ট্রাভেল ব্লেন্ডার পণ্যসামগ্রী।
তিনি আরও জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে। মেলার বাকি দিনগুলোতে আরও বেশি বিক্রি হবে। তার আশা, বরাবরের মতো এবারও সেরা ভ্যাটদাতা হিসেবে পুরস্কৃত হবে ওয়ালটন।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে বিক্রি হচ্ছে ইন্ডাকশন চুলা, ইলেক্ট্রিক প্রেসার কুকারসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি পণ্য। দেশীয় প্রতিষ্ঠান আরএফএলের প্যাভিলিয়নে ইলেক্ট্রনিক পণ্যের নতুন ব্র্যান্ড ভিশনের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য। বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ। প্যাভিলিয়নে কর্মরত এক বিক্রয়কর্মী জানান, নামের কারণেই উপচে পড়া দর্শক ক্রেতা আরএফএলের প্যাভিলিয়নে আসছে। বেচাবিক্রিও প্রচুর হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মিনিস্টার প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ মো. মামুন জানান, ক্রেতাদের উপস্থিতি ও বেচাবিক্রিও মোটামুটি ভালো। ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীদের প্রচুর ভিড়। এ ভিড় এখন থেকে প্রতিদিনই থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বিক্রির চাপ এত বেশি ছিল যে ব্রাদাসের ইনচার্জ এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি। তিনি অনুরোধ করে বলেন, ভাই পরে আসেন।