বাজেট ‘বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য’

05/06/2015 12:50 pmViews: 7

 বাজেট ‘বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য’

 

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে পুরোপুরি গতানুগতিক, সাদামাটা, অবাস্তব ও অবাস্তবায়নযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এতটা অবাস্তব স্বপ্নের বাজেট অতীতে কখনও দেয়া হয়নি, যা বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য। গতকাল জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদরা মানবজমিনকে এসব কথা বলেন। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মীর্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট
গতানুগতিক, সাদামাটা ও আগের মতোই। এর মধ্যে কিছু অবাস্তব ও অনাকাঙ্ক্ষিত টার্গেট রয়েছে। বিশাল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের স্বপ্ন অনেকটাই অবাস্তব। বাজেটে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটির টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩০.৬৬ শতাংশ বেশি। বাজেট প্রস্তাবনায় রাজস্ব আয়ের ৮৩ শতাংশ এনবিআরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটের রাজস্ব আদায়ের এ লক্ষ্যমাত্রা এতটাই অবাস্তব স্বপ্ন, যা অতীতে কখনও দেখেননি এ অর্থনীতিবিদ। তার মতে, বরাবরের মতো এবারও জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের টার্গেট অনেকটাই দুঃসাধ্য। এ ছাড়া ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণের সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়। এর মাধ্যমে বেসরকারি খাত নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করেন তিনি। বাজেটে ইতিবাচক দিক হিসেবে অবকাঠামোসহ করপোরেট কর হার কমানোকে ভাল অর্থে মূল্যায়ন করেন এ অর্থনীতিবিদ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, বাজেটে আয় খাতে অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবসম্মত নয় বলেও মনে করেন তিনি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটে আর্থিক কাঠামোর আকার বিচার করে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে আয় সংস্থান করা হয়েছে। এ আয় সংস্থান করতে গিয়ে আয়ের উৎসে অবাস্তব ধরনের প্রাক্কলন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেটের যে স্ফীতি, বাস্তবসম্মত পরিসংখ্যান ভিত্তিতে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। এ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যে পদক্ষেপ তাও দেখছি না। তবে ন্যূনতম আয়ের যে করারোপ তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত বছর থেকে এ দাবি জানিয়ে আসছিল সিপিডি। ব্যক্তি ও করপোরেট পর্যায়ে করের হার, সম্পদের ওপর সারচার্জ নির্ধারণ নিয়ে কোন সমস্যা দেখছি না। শিশু বাজেটও ইতিবাচক। তবে জেলাভিত্তিক বাজেট না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে সিপিডি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেটে সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নের কোন দিকনিদের্শনা নেই। তার মতে, এ বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় ঠিক থাকলেও পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। অন্যদিকে প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য হবে। একই সঙ্গে জিডিপির প্রবৃদ্ধিও অর্জন করা কষ্টকর হবে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. এইচ আহসান মনসুর বলেন, এবার বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যেসব বাধা ছিল তা দূর না করে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। ফলে আগে যা ছিল আগামী বাজেটেও তাই থাকছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বিশাল রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের কাঠামো ও নীতিগত সংস্কার জরুরি। এ ছাড়া বিদেশী বিনিয়োগ আনতে হলে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

Leave a Reply