বাইডেনের পররাষ্ট্র বিষয়ক দলটি কী বার্তা দিচ্ছে?

27/11/2020 10:18 pmViews: 6

বাইডেনের পররাষ্ট্র বিষয়ক দলটি কী বার্তা দিচ্ছে?

এ্যান্টনি ব্লিংকেন হবেন পরবর্তী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী – ছবি : সংগৃহীত


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেন তার প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কারা থাকবেন তা ঠিক করছেন এখন।

এর মধ্যে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দলে যে তিনজনকে নেতৃত্বের পদের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে – তার প্রশংসা-সমালোচনা দুটিই হচ্ছে।

একদিকে বলা হচ্ছে, এ তিনজন তাদের কয়েক দশকের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা হোয়াইট হাউসে নিয়ে আসবেন।

অন্যদিকে সমালোচনাও হচ্ছে যে তারা যেহেতু বহু বছর মার্কিন সরকারের সাথে কাজ করেছেন তাই তাদের হাত ধরে সেসব পুরোনো ভাবনাচিন্তাই এখন ফিরে আসবে।

প্রশ্ন হলো – এই ব্যক্তিরা কে? মি. বাইডেন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে এই তাদের বেছে নিয়ে কি বার্তা দিতে চাইছেন?

এখানে তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।

তারা কে?
পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বাইডেনকে পরামর্শ দেবেন যে তিনজন – তারা হলেন এ্যান্টনি ব্লিংকেন, লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড এবং জেইক সুলিভ্যান। তারা ওয়াশিংটনের বাইরে খুব একটা পরিচিত নন।

তবে এরা সবাই বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকার সময় এক সাথে হোয়াইট হাউসে কাজ করেছেন।

মনে করা হয় যে তারা জো-বাইডেনের প্রতি অনুগত এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মধ্যপন্থী।

আটান্ন বছর বয়স্ক মি. ব্লিংকেন প্রায় ২০ বছর ধরে বাইডেনের সাথে কাজ করছেন। তাকে বেছে নেয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক।

লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ কূটনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিতদের মধ্যে একজন। তিনি আফ্রিকা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেক বছর ধরে কাজ করছেন। জাতিসংঘে মার্কিন দূত হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি।

জেইক সুলিভ্যান হচ্ছেন পররাষ্ট্র দফতরের একজন সাবেক কর্মকর্তা এবং হিলারি ক্লিনটনের সহযোগী – যিনি ২০১৫ সালে ইরানের সাথে করা পরমাণু চুক্তির আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। বাইডেন যখন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন জেইক সুলিভ্যান।

“ভেতর-মহলের লোক”
বাইডেন যখন ডেলাওয়ারের সেনেটর হিসেবে বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে ছিলেন, তখন থেকেই তার সাথে কাজ করছেন ব্লিংকেন।

২০০৩ সালে ইরাকে অভিযানের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন মি.বাইডেনে এবং এর জন্য ব্লিংকেনকেই দায়ী করেন কিছু সমালোচক।

বেশ কিছু সাবেক মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, তবে এর ফলে বিভিন্ন ধরণের মত শোনার সুযোগ কমে যেতে পারে।

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনে কাজ করার বিপুল অভিজ্ঞতা তাদের আছে, কিন্তু তা হয়তো তাদেরকে সবার কাছে প্রিয় করে তুলবে না।

তবে ট্রাম্প যেভাবে সরকারের ভেতরের যে লোকেরা তার এজেণ্ডার বিরুদ্ধে কাজ করছেন বলে সন্দেহ করতেন, এবং তার ভাষায় সেই ‘ডিপ স্টেটের’ বিরুদ্ধে তিনি যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন – সেটা হয়তো এখন বন্ধ হবে।

সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পি জে ক্রলি বলছেন, “এই দলে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নন। তাদের পরস্পরের সাথে ভালোভাবে কাজ করার ইতিহাস আছে। তারা কোন বৈশ্বিক সংকটের সময় অভিজ্ঞতা এবং সম্পূরক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আসতে পারবেন। …তারা অভিন্ন স্বার্থ ও মূর‍্যবোধের প্রতি মনোযোগী একটি আমেরিকান রাষ্ট্রকে কার্যকর নেতৃত্ব দেয়ায় ভুমিকা রাখবেন।”

এ্যান্ড্রু বাসেভিচ হচ্ছেন কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্র্যাফট-এর সভাপতি। তিনি বলছেন, “নীতির ক্ষেত্রে ভুলের প্রবণতা কাটিয়ে এই নিয়োগগুলো একটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে। তবে এটাই যথেষ্ট কিনা সেটা একটা প্রশ্ন। এই দলটিতে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের ওপর একটা বিশ্বাস আছে এবং তা হয়তো তাদেরকে আমেরিকান সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে হঠকারিতার পথে নিয়ে যেতে পারে।”

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন সাবেক সদস্য চার্লস কাপচান বলছেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা মিসেস টমাস-গ্রিনফিল্ড বিশেষ করে সেই ডিপ স্টেটের প্রতিনিধি – যাদের ডোনাল্ড ট্রাম্প দুচোখে দেখতে পারতেন না। তিনি মনে করতেন, পররাষ্ট্র দফরের কর্মকর্তারা হচ্ছেন উদার আন্তর্জাতিকতাবাদের সৈনিক, যাদের তিনি উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। পররাষ্ট্র দফতরে এখন যে হতোদ্যম অবস্থা তার একটা কারণ হচ্ছে এটা। ”

বৈশ্বিক জোট
বাইডেন টিমের এজেন্ডায় সবার ওপরে থাকবে – সেই সব সংস্থা, জোট এবং চুক্তিগুলোতে আবার যোগদান, যেগুলোকে মি. ট্রাম্প ভেঙে দিতে বা দুর্বল করতে চার বছর ধরে চেষ্টা করেছেন।

তাদের একটা কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে আবার ফিরিয়ে আনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে সদস্য রাখা। তারা ইরান পরমাণু চুক্তিটিকেও সংশোধনের চেষ্টা করবেন, নেটোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করবেন এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলার জন্য নানা রকম বাণিজ্য চুক্তি করবেন।

এ্যান্ড্রু বাসেভিচ বলছেন, “ট্রাম্প যে ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন তার একটা কারণ ছিল, এক বিপুল সংখ্যক আমেরিকান মনে করতে যে তাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে। তাই বাইডেনের টিমকে সেই সব পরিবর্তনগুলো করতে হবে যা আমেরিকার দরকার – যেমন সামরিক বাজেট কমানো এবং সামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো সংযত হওয়া। ”

পি জে ক্রলির কথায়, ট্রাম্পের আসলে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা দল ছিল না। তার চারপাশে থাকা লোকজনকে তিনি টুইট করে নিয়োগ বা বরখাস্ত করতে পারতেন। কিন্তু বাইডেনের টিমের এই লোকেরা পররাষ্ট্র দফতরে কাজ করেছেন, তাই তারা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং সহযোগিতাকে মূল্য দেবেন।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সএর পরিচালক স্টুয়ার্ট প্যাট্রিক বলছেন, “গত চার বছরের মধ্যে এবার দ্বিতীয় বারের মত পররাষ্ট্রনীতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাবে। “আমেরিকা যে ফিরে এসেছে’ এ কথাটা বিদেশের মিত্র ও সহযোগীদের বিশ্বাস করানোটা হবে একটা চ্যালেঞ্জ।” তবে আগামী প্রশাসনের সেই সাত দশকের পুরোনো জোটগুলোকে পুনপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একটা অঙ্গীকার আছে বলে তিনি মনে করেন।

বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাবর্তন

অনেকেই মনে করছেন যে বাইডেন যে দল গড়ে তুলেছেন – তা ট্রাম্পের দলের চাইতে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। ট্রাম্পের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ছিলেন এক্সন মবিল তেল কোম্পানির নির্বাহী।

টিলারসনের জায়গায় এসেছেন মাইক পম্পেও। তাদের সময় অনেক কূটনীতিক আশাহত হয়ে আগেভাগেই অবসর নিয়ে চলে গেছেন।

পররাষ্ট্র দফতরে ট্রাম্প পরবর্তী এই পরিস্থিতি অনেক গভীর । এক দিনে এর পরিবর্তন সম্ভব নয়।

চার্লস কাপচান বলছেন, “টিলারসন এবং পম্পেও-র সময় পররাষ্ট্র দফতর থেকে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অনেকে বিদায় নিয়েছেন। সাধারণত নীতি প্রণীত হয় নিচে থেকে এবং কয়েকটি সংস্থার ভেতর দিয়ে পার হয়ে তবে তা প্রেসিডেন্টে কাছে পৌছায়। কিন্তু ট্রাম্পের সময় তা ঘটছিল না।”

পি জে ক্রলি বলছেন, বাইডেনের দলের এই তিনজনের একই রকম বিশ্ববীক্ষা আছে, এবং তারা আমেরিকার নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক জোটে বিশ্বাসী।

রিপোর্ট করেছেন তারা ম্যাককেলভি ও ম্যাক্স মাৎজা।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply