বাংলাদেশ ভিক্ষা নেয়না, ঋণ নেয়:প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ ভিক্ষা নেয়না, ঋণ নেয়:প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছ থেকে কোনো ভিক্ষা নেয় না বরং ঋণ নিয়ে থাকে এবং তা পরিশোধও করে থাকে। এ সময় সবাইকে অন্তত তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেখানে বীজ ফেললেই গাছ ওঠে সেখানে বাংলাদেশে বনায়নের অভাব থাকবে কেন? আমরা যদি সবাই আন্তরিক হই তাহলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দেশের ভূ-প্রকৃতিকে অচিরেই বদলে দিতে পারবো।
রোববার দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউটে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৫ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় দেশের প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন ও পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে অন্তত একটি বনজ, একটি ফলদ ও একটি ঔষধি চারা রোপণের আহ্বানও জানান।
এবারের বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রতিপাদ্য হলো পাহাড়, সমতল, উপকূলে গাছ লাগাই সবাই মিলে। কৃষিবিদ ইনিস্টিউটে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ইনিস্টিটিউট প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের একার পক্ষে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার মত একটি কঠিন কাজ করা সম্ভব না। এটি কেবল সম্ভব যৌথ চেষ্টার মাধ্যমে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ পৃথিবীকে যতটুকু যতেœ লালন করবো পৃথিবী ঠিক ততটুকু সম্ভাবনা ধারণ করবে আমাদের জন্য। কাজেই প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণ আমাদের নিজেদের স্বার্থেই করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ এবং বনায়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
এজন্য আমরা একদিকে বিদ্যমান বন সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিয়েছি অন্যদিকে সরকারি পর্যায়ে নতুন বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছি। ২০০৯ থেকে বিগত ছয় বছরে মোট বনভূমির পরিমাণ ছিল ৯ শতাংশ তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ছয় বছরে বনভূমির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এটা অন্তত ২৫ শতাংশ হওয়া উচিত এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী করার ওপর জোর দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানো, বন্যপ্রাণী পাচার রোধে অপরাধ দমন ইউনিট গঠন, বন্যপ্রাণী চিকিৎসার জন্য উদ্ধার ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন, বন্যপ্রাণী বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য গাজীপুরে আন্তর্জাতিক মানের ওয়াইল্ড লাইফ সেন্টার প্রতিষ্ঠা, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং পাখি সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় শেখ রাসেল এভিয়ারি ও ইকো পার্ক প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পরিবেশ পদক, বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার এবং সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণকারী সর্বোচ্চ লভ্যাংশ প্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এবার জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্তরা হলেন- পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা ও প্রচারে ব্যক্তিগত ক্যাটাগরিতে আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু।
বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), নিশান-নওগাঁ ইনিশিয়েটিভস ফর সোসাইটি হেরিটেজ অ্যান্ড নেচার এবং রাজশাহী জেলা পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছি গ্রামের মো. হামিদ মাস্টার। এছাড়া আরও ১০টি ক্যাটাগরিতে ৩০ জনকে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০১৪ দেওয়া হয়।