বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ছয় চুক্তি সই
বাংলাদেশ এবং চীন সরকারি-বেসরকারি খাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারে শিক্ষা, গণমাধ্যম ও বাণিজ্য খাত সংক্রান্ত ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে তিনটি হচ্ছে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ), দুটি সহযোগিতা চুক্তি এবং একটি বিনিময় নোট। বাসস।
রোববার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের সফররত উপপ্রধানমন্ত্রী লিও ইয়ানডংয়ের মধ্যে বৈঠক শেষে এসব চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিও ইয়ানডং এসব চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
দু’দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান এবং চীনের শিক্ষামন্ত্রী ইউয়ান গুইরেন। বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয় ও চীনের প্রেস এবং পাবলিকেশন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের মধ্যে বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ এবং চীনের উপমন্ত্রী টং গেং।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির (বিএফএসইউ) মধ্যে ছাত্রছাত্রী, ফ্যাকাল্টি, স্কলার্স ও প্রশাসনিক স্টাফ বিনিময়, গবেষণা সহযোগিতা এবং শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত বিনিময়ে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ স্মারকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বিএফএসইউ প্রেসিডেন্ট পেং লং স্বাক্ষর করেন।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও চীনের উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (ডব্লিউটিইউ) মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন এবং ডব্লিউটিইউর ভিসি ওয়ে ইলিয়াং স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশের বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং চীনের ডব্লিউটিইউর মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইন সংক্রান্ত জয়েন্ট আন্ডার গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের লক্ষ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোজাফফর ইউ সিদ্দিক এবং ডব্লিউটিইউর চ্যান্সেলর ওয়ে ইলিয়াং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কন্টেইনার পরিদর্শন সরঞ্জাম প্রকল্প সংক্রান্ত একটি বিনিময় নোটও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ইআরডির সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন এবং বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং স্বাক্ষর করেন।
এর আগে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানডংকে বহনকারী চার্টার্ড বিমান ৫টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপনের বিষয়ে তিন দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশ সফর করছেন লিউ ইয়ানডং।
ঢাকা সফরকালে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে। আজ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। কাল বিকালে তিনি ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
অবৈধভাবে যারা যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা- প্রধানমন্ত্রী : যারা মানব পাচারে জড়িত, তাদের পাশাপাশি যারা সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে অভিবাসনের চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে। যারা এভাবে অবৈধভাবে বিদেশ নিয়ে যাবে এবং যারা দালাল তাদের যেমন শাস্তি হতে হবে, যারা যাবে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তারা তো আমাদের দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। রোববার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সম্প্রতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাগরপথে মানব পাচার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হল এত সুযোগ-সুবিধা করে দেয়ার পরও মানুষ দালালের হাতে টাকা দিয়ে একবারে একটা অনিশ্চিত জায়গায় যাচ্ছে। কেন যে এভাবে যাচ্ছে- স্বগতোক্তি প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, সবাই যে অভাবের তাড়নায় যাচ্ছে তা নয়। মনে হচ্ছে, তারা একটা সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে। বাইরে গেলেই মনে হয় অনেক টাকা।
গত মাসের শেষে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের একটি পরিত্যক্ত আস্তানায় গণকবর পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাগরপথে মানব পাচারের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়।
এরপর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য। মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার এ প্রবণতা ‘সংক্রামক’ আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, মানসিক অসুস্থতার মতো হয়ে যাচ্ছে মানুষের। বাইরে যেতে হবে, গেলেই যেন অনেক টাকা পাবে। এতে জীবনটা যাচ্ছে অথবা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য অর্থ না ব্যয় করে তা দিয়ে দেশেই কিছু করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দালালের হাতে যে টাকা দিচ্ছে, সে টাকা দিয়ে যদি নিজেরা কিছু করে তাহলে অনেক ভালোভাবে থাকতে পারবে। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার বিপজ্জনক দিকটি তুলে ধরে এ প্রবণতা বন্ধের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এটা অনেক দুর্ভাগ্যজনক। আমি মনে করি, প্রচার চালানো দরকার। দালালদের টাকা দিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এরা ধোঁকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগরে ভেসে চলে যাওয়ার চেষ্টা…। তাদের তো ধারণাই নেই যে, কোথায় যাবে। বনে-জঙ্গলে এখন লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পথ বন্ধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এরা নিজের জীবনটা বিপদে ফেলছে। তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাহলে হয়তো এগুলো থামবে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় সেখানে আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।
সৌদি আরবে মসজিদে বোমা হামলায় দুঃখ প্রকাশ : সৌদি আরবে মসজিদে বোমা হামলায় ২১ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সাদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার কথা ব্যক্ত করেন।