বাংলাদেশে আইনের শাসন বলে কিছুই নেই : খালেদা জিয়া

দেশে যত ঘটনা ঘটছে তাতে সরকারি দল জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইনের শাসন বলে কিছুই নেই, রাজতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে।
রোববার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে লন্ডনের হিলটন হোটেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘদিন পর কোনো সভায় মা ও ছেলে একসঙ্গে উপস্থিত হন। যদিও গত ঈদের দিন এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তারা দু’জন উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে তারেক রহমান কোনো কথা বলেননি। গতকালের মতবিনিময় সভায় মা ও ছেলে দুজনই বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়েছে এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, রাজতন্ত্রের জন্য আছেন একজন লেডি হিটলার। কারণ তিনি যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন; তার সৈন্য-সামন্তরা যারা আছে, অর্থাৎ প্রশাসন, তারা সেভাবে কাজ করছেন। সবকিছু তার কথামতো চলে।
বাংলাদেশে এখন আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজকে মোটেও ভালো নেই, মোটেও শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত জুলুম-অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে দায়ী করে খালেদা জিয়া বলেন, জঙ্গি জঙ্গি হাসিনাই বলেছে, কিসের জন্য? বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য। বোঝাতে চাইছে আমরা যদি চলে যাই, বিএনপি এলে জঙ্গিদের উত্থান হবে। কিন্তু দেখেন, জঙ্গিদের উত্থান কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে। তারা একটা জঙ্গিকে ধরেনি। আমরা এসে সব জঙ্গিকে ধরেছি।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। সেজন্য একের পর এসব ঘটনা ঘটছে। আর সবকিছুতে বিএনপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, গত সাত বছরে বিএনপির তিন হাজার নেতাকর্মীকে খুন, এক হাজার ২০০ জনকে গুম, এক হাজার ১২ জনকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে। কতো মানুষকে বেনজীর (র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ) মেরেছে তার হিসাব নেই।
বিএনপি ভাঙার জন্যও সরকার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া বলেন, বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনও কম করেনি।
আওয়ামী লীগকে হটাতে সব দল-মতের মানুষকে নিয়ে কাজ করার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারের বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় করবেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, তাবিথ আউয়াল, যুক্তরাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, যুক্তরাজ্য সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ডা. কেএমএ মালিক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, ব্যারিস্টার আবু সায়েম, হুমায়ুন কবির, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ, বিএনপি নেতা শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস, মুজিবুর রহমান মজিবসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েকশ নেতা অংশ নেন।
১৬ সেপ্টেম্বর চোখের চিকিৎসা করাতে লন্ডন যান খালেদা জিয়া। তার দেশে ফেরার ব্যাপারে দলের নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না। ইতিমধ্যে চারদফা টিকিট বুকিং দিয়েও শেষমুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। তবে দেশে ও লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই তিনি দেশে ফিরতে পারেন।