“বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মৌলিক অধিকার।”
“বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মৌলিক অধিকার।”
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের সংবিধানে আমাদের মৌলিক অধিকার সমূহ জানা আবশ্যক। বাংলাদেশের সংবিধানে তৃতীয় ভাগে ২৬ থেকে ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমেই বুঝতে হবে মৌলিক অধিকার কি? “যখন মানুষের কতিপয় সহজাত ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তখন তাকে মৌলিক অধিকার বলে।”
বাংলাদেশ সংবিধানে সংরক্ষিত মৌলিক অধিকারসমূহঃ
বাংলাদেশ সংবিধানে ১৮ টি মৌলিক অধিকার সন্নিবেশ করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ২৭ থেকে ৪৪ পর্যন্ত ১৮ টি অধিকারের প্রকৃতি ও ভোগের নিশ্চয়তা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো সবই পৌর ও রাজনৈতিক অধিকার।
অনুচ্ছেদ ২৭ঃ আইনের দৃষ্টিতে সমতা; অনুচ্ছেদ ২৮ঃ ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য; অনুচ্ছেদ ২৯ঃ সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা; অনুচ্ছেদ ৩০ঃ বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩১ঃ আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার; অনুচ্ছেদ ৩২ঃ জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার; অনুচ্ছেদ ৩৩ঃ গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ; অনুচ্ছেদ ৩৪ঃ জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩৫ঃ বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ; অনুচ্ছেদ ৩৬ঃ চলাফেরার স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৭ঃ সমাবেশের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৮ঃ সংগঠনের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৯ঃ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪০ঃ পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪১ঃ ধর্মীয় স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪২ঃ সম্পত্তির অধিকার; অনুচ্ছেদ ৪৩ঃ গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ; অনুচ্ছেদ ৪৪ঃ মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ।
এই অধিকার প্রয়োগ করার জন্য সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ বর্নিত বিধান অনুযায়ী হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা যাবে। মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন সংক্ষুব্ধ নাগরিক হাইকোর্টে রীট অথবা জনস্বার্থমূলক মামলা করতে পারবেন।
এই ১৮ টি অধিকার কে ০২ (দুই) টি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ (০১) রাষ্ট্রে অবস্থানরত নাগরিক ও বিদেশী উভয়, (০২) শুধূমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক –
(০১) রাষ্ট্রে অবস্থানরত নাগরিক ও বিদেশী উভয়ে ভোগকরতে পারে ০৬ টি অধিকারঃ অনুচ্ছেদ ৩২ঃ জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার; অনুচ্ছেদ ৩৩ঃ গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ; অনুচ্ছেদ ৩৪ঃ জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩৫ঃ বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ; অনুচ্ছেদ ৪১ঃ ধর্মীয় স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪৪ঃ মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ।
(০২) শুধূমাত্র বাংলাদেশের নাগরিকরা ভোগ করতে পারেঃ অনুচ্ছেদ ২৭ঃ আইনের দৃষ্টিতে সমতা; অনুচ্ছেদ ২৮ঃ ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য; অনুচ্ছেদ ২৯ঃ সরকারী নিয়োগলাভে সুযোগের সমতা; অনুচ্ছেদ ৩০ঃ বিদেশী খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩১ঃ আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার; অনুচ্ছেদ ৩৬ঃ চলাফেরার স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৭ঃ সমাবেশের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৮ঃ সংগঠনের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৯ঃ চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪০ঃ পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪১ঃ ধর্মীয় স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪২ঃ সম্পত্তির অধিকার; অনুচ্ছেদ ৪৩ঃ গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ;
মৌলিক অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপঃ বাংলাদেশ সংবিধান ঘোষিত মৌলিক অধিকার গুলোর উপর কতিপয় ক্ষেত্রে বাধানিষেধ আরোপ কারা হয়েছে। বাধানিষেধ আরোপের উপর ভিত্তিকরে মৌলিক অধিকার গুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যায়*ঃ
ক) যে সকল মৌলিক অধিকারের উপর কোন প্রকার বাধানিষেধ আরোপ করা যায় না- এরূপ মৌলিক অধিকার ৪টিঃ অনুচ্ছেদ ২৭ঃ আইনের দৃষ্টিতে সমতা; অনুচ্ছেদ ৩৪ঃ জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩৫(১)ঃ কোন একটা কাজ যে সময় সম্পন্ন করা হলো তখন উক্ত কাজটা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ ছিল না কিন্তু পরবর্তী সময়ে আইন প্রণয়ন করে যদি উক্ত কাজকে সংঘটনকালে থেকেই ঘোষণা করা হয় তাহলে এরূপ আইনের অধীনে বিচার থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার; অনুচ্ছেদ ৪১(১)ঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় স্বাধীনতা।
খ) যে সকল মৌলিক অধিকারের উপর যক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করা যায়ঃ অনুচ্ছেদ ৩৬ঃ চলাফেরার স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৭ঃ সমাবেশের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৮ঃ সংগঠনের স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৩৯ (২) (ক) (খ)ঃ বাক্-স্বাধীনতা;৪১ঃ ধর্মীয় স্বাধীনতা; অনুচ্ছেদ ৪৩ঃ গৃহ ও যোগাযোগের রক্ষণ;
গ) কি কি কারণে এ সকল অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে তাও সুনিদিষ্টভাবে অনুচ্ছেদগুলোতে বলে দেয়া হয়েছে, কারণগুলো- জনস্বার্থে (অনুঃ ৩৬), জনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে (অনুঃ ৩৭), জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে (অনুঃ ৩৮), রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে (অনুঃ ৩৯), আইন-শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে (অনুঃ ৪১), রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যেও স্বার্থে (অনুঃ ৪৩)
* উল্লেখ্য, কয়েকটি অধিকার যা ২৮, ২৯, ৩০, ৩৩, ৪০ এবং ৪৪ অনুচ্ছেদে বর্ণিত- এই তিন ভাগের মধ্যে সরাসরি আসে না।
উপরোক্ত অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে সংসদ ইচ্ছামত বাধা-নিষেধ আরোপ করতে পারে না; শুধুমাত্র উল্লেখিত স্বার্থে এং যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ আরোপ করতে পারে। উপরোক্ত অধিকারের উপর বাধানিষেধ আরোপের লক্ষ্যে সংসদ কোন আইন প্রণয়ন করলে আদালত উক্ত আইনের বৈধতা বিচার করতে পারে, কারণ আরোপিত বাধা-নিষেধ যুক্তিসঙ্গত কি না এবং জনস্বার্খে বা নৈতিকতা ইত্যাদি উল্লেখিত স্বার্থে করা হয়েছে কি না তা দেখার দায়িত্ব আদালতের। নিজস্ব প্রতিবেদক:
মোঃ শফিউল আলম
এল.এল.বি (অনার্স)