বাংলাদেশের কূটনীতিককে প্রত্যাহার করতে বলল পাকিস্তান
ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ সময় মৌসুমী রহমানকে বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে ইসলামাবাদ থেকে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়। জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে সম্প্রতি পাকিস্তানের নারী কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করতে বলেছিল ঢাকা। পরিপ্রেক্ষিতে ফারিনাকে ফিরিয়ে নিলেও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে নিতে বলল পাকিস্তান। যদিও মৌসুমী রহমানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলতে পারেনি পাকিস্তান।
মৌসুমী রহমান ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সিলর পদে কর্মরত আছেন। ফরেন সার্ভিসের এই মেধাবী কর্মকর্তা গত বছরের ১৮ জানুয়ারি ইসলামাবাদের কর্মস্থলে যোগ দেন। জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে বাংলাদেশ অবশ্য অনানুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নিতে বলেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানও একইভাবে মৌসুমী রহমানকে ফিরিয়ে নিতে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছে। তাছাড়া মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করলেও রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাকিস্তান কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। ফলে পাকিস্তান সরকার মৌসুমী রহমানকে ইসলামাবাদ থেকে ‘পার্সনা নন গ্রাটা’ (বহিষ্কার) নাকি প্রত্যাহারে অনানুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে তা স্পষ্ট নয়। কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে একটি প্রতিবাদপত্র দিয়েছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে সম্প্রতি দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী দু’এক মাসের মধ্যেই ফিরে আসবেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এই সময়েই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে তলব করল। তাকে ডেকে নিয়ে মৌসুমী রহমানকে প্রত্যাহারের বার্তা দিল পাকিস্তান।
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মৌসুমী রহমানকে সরকার ঢাকায় ফিরিয়ে আনছে না। তাকে পাকিস্তান থেকে পর্তুগালে বদলির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাকে লিসবনে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হতে পারে।
সোহরাব হোসেন শারীরিক অসুস্থ থাকায় কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করেন। তাই সম্প্রতি মানবতাবিরোধী বিচার ঘিরে প্রতিবাদ জানাতে মৌসুমী রহমানকে বারবার তলব করে পাকিস্তান। এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে এর আগে গত জানুয়ারিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে একই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয় পাকিস্তান। এরপর সন্দেহভাজন কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ইদ্রিস শেখ নামে একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে পাকিস্তানি এক নারী কূটনীতিকের জঙ্গি যোগসাজশের তথ্য পাওয়ার দাবি করে গোয়েন্দা পুলিশ। জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে পাকিস্তানকে বলা হয়। বাংলাদেশ এই মর্মে সতর্ক করে যে, এই নারী কূটনীতিককে ফিরিয়ে না নিলে বাংলাদেশ তাকে ‘পার্সনা নন গ্রাটা’ (বহিষ্কার) ঘোষণা করবে। তখন পাকিস্তান কিছুটা সময় চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের দেশের কূটনীতিককে ফিরিয়ে নেয়।
বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ইতিপূর্বে ইরফান রাজা নামের পাকিস্তানের একজন ডেপুটি হাইকমিশনারকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কটূক্তি করায় বহিষ্কার করা হয়। তখন অবশ্য পাকিস্তান কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নেয়নি।
পাকিস্তানি নারী কূটনীতিকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে যে, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তান সরকারের কাছে অনানুষ্ঠানিক অনুরোধ জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একসময় পাকিস্তানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা ইদ্রিস শেখ ঢাকার হাকিম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের ফারিনার সঙ্গে যোগাযোগ ও তার কাছ থেকে টাকা পাওয়ার তথ্য দেন। বাংলাদেশ থেকে পরপর দু’জন পাকিস্তানি কর্মকর্তা জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে প্রত্যাহারের পর ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনের অন্য কর্মকর্তাদের প্রতিও সন্দেহের দৃষ্টি রয়েছে গোয়েন্দাদের। বিশেষ করে আরও কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা সে বিষয়ে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, ইদ্রিস শেখ গত ২৯ নভেম্বর গ্রেফতার হন। তিনি গত ৬ ডিসেম্বর জঙ্গি তৎপরতায় পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদ জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে যে, ফারিনা আরশাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।