বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয়া ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা বিদেশিদের আর কিছু করার নেই: ইইউ
বাংলাদেশকে পরামর্শ দেয়া ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন তথা বিদেশিদের আর কিছু করার নেই: ইইউ
অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সিজিএস’র চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের প্রেক্ষিত তুলে ধরে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। বন্ধুত্বপূর্ণ ওই সম্পর্কের আমরা গর্বিত।
বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পেছনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতেও এই ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আগামী দশকে বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়াতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ আঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা ব্যক্ত করে ইইউ দূত বলেন, এটি ঠেকাতে সার্ক ও বিমসটেক কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
যদিও এই অঞ্চলে সকলের অবস্থান শক্ত করতে ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে গুরুত্ব দিচ্ছে ইইউ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কাঠামোগতভাবে জটিল হলেও এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখাই এর মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, শুধুমাত্র সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়ানোই নয়, একই সাথে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শক্তিশালী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক বৃদ্ধি করাও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, সুশাসন ও গণতন্ত্র, সামরিক সহায়তা, শান্তিরক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এছাড়াও সদস্য রাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি বৈশ্বিক ক্ষেত্র তৈরি করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে দেখতে চান? সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী ১০ বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নীত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের আগামীর দিনগুলোতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বাজারকে এর সাফল্যের ধারা বজায় রাখতে হবে। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও শরণার্থী সংকট রয়েছে। তাই আমরা জানি শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া কতটা ব্যয়বহুল হতে পারে। রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যথাসম্ভব চেষ্টা করছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এজন্য ভারত, চীনের মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশগুলোকে এক ছাদের নিচে আনতে হবে। মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কূটনৈতিক পদ্ধতি অবলম্বন করছে। ইউরোপে আর কোনো যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটুক- সেটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায় না বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত। যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশ, ভারত এবং চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে কিনা? জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
একই সঙ্গে চীনও বিশ্বে একটি পরাশক্তি হয়ে উঠেছে। চীনের সঙ্গে কিছু বিষয়ে আদর্শগত ভিন্নতা থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে বলে জানান তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশি পোশাক শিল্পের স্থানীয় ব্র্যান্ড তৈরিতে কখনও আগ্রহ প্রকাশ করেছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিজিএমইএ’র একটি পরিকল্পনা আছে। তবে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত নির্মাণশিল্পে তাদের আগ্রহ বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলো তারা কাজে লাগাতে চান। তিনি আরও বলেন, পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে প্রযুক্তিখাতে প্রশিক্ষণের পরিমাণ বাড়াতে চায়। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যক্রমের কথা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক্ষেত্রে বিস্তৃত ক্ষেত্র তৈরি করছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার সংক্রান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্তব্য করার কোনো অধিকার নেই- সরকারের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো বিশেষ বিনিয়োগ করছে কিনা? জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বাস্থ্যখাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মসূচি সীমিত আকারে রয়েছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বেশকিছু কর্মসূচি তারা হাতে নিয়েছিলেন বলে জানান। সাংবাদিক এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিবিদ্যার উপর বিশেষ জোর দিতে হবে। তিনি বাংলাদেশের পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি পর্যটন শিল্পের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে উঠবে। কেবলমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং মানব উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ ইইউ দূত।