বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়: ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বুধবার বিকালে রাজধানীর শান্তিনগরে হোয়াইট হাউজ রেস্টুরেন্টে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘এই সরকারের অধীনে নির্বাচনকে না বলুন’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে এ কথা বলেন তারা।
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না। এর সাথে আমরাও একমত প্রকাশ করছি। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন তো না-ই, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে এখন সময় এসেছে সরকারকে না বলার। এই সরকারকে বিদায় দেয়ার জন্য আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং এদেশের মানুষের মালিকানা তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সকল গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক শক্তি, রাজনৈতিক শক্তি, দল ও ব্যক্তিকে আমরা আহবান জানাবো এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে এদেশের জনগণকে মুক্ত করি। সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যে কর্মসূচি প্রয়োজন হবে তা আলোচনার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেই।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে ও সাকিব আনোয়ারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি (জেএসডি) আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু, বিকল্প ধারার অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন ব্যাপারী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির ড. রেদোয়ান আহমেদ, অপর অংশের শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির আবু তাহের, গণ অধিকার পরিষদের ড. রেজা কিবরিয়া, ভিপি নূরুল হক নূর, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ। ইফতারে অংশগ্রহণ করেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল মিন্টু, শওকত মাহমুদ, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও তার সহধর্মিণী নাসিমা খান, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, শ্যামা ওবায়েদ, রিয়াজ উদ্দিন নসু, তাঁতী দলের কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
আ স ম আবদুর রব বলেন, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধে যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিলো আওয়ামী লীগ তাকে হত্যা করেছে। আজকে ৫০ বছরেও দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হয় নাই। একটা কথা পরিস্কার, আমরা এখানে যারা উপস্থিত আছি কেউ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবো না-এই প্রশ্নে কোনো দ্বিমত নাই
আমাদের কথা স্পষ্ট এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেজন্য এদেরকে হটাতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প পথ নেই। তবে এই সরকারকে বিদায়ের পর কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে সেটা আমাদের আগেই ঠিক করতে হবে। সেই সরকারটি অবশ্যই এমন সরকার হতে হবে যারা নিরপেক্ষ ও অবাধ একটি নির্বাচন করতে পারবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যারা যারা কথা বলেছেন সবার কথার মধ্যে এই প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। আমরা যাবো না। এই সরকার চলে যাওয়ার পরে যে সরকার হবে সেটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। এই সরকার কেমন হবে। কেউ জাতীয় সরকার বলছেন, কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলছেন, কেউ বলছেন, তদারকির সরকার। এ থেকে সরকার পক্ষের মিডিয়াগুলো মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবার চেষ্টা করছে- ওরা পরের সরকারের ব্যাপারে একমত নয়, মতপার্থক্য আছে, ওদের ঐক্য হবে না। তাদের জন্য আমরা একটা ম্যাসেজ দিতে চাই- আমরা যে নামেই ডাকি না কেনো আমরা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার চাই সেই সরকার পরবর্তী নির্বাচনকে সুগম, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফ্যাসিজমের হাত থেকে রেহাই পেতে জাতীয় ঐক্য দরকার। আমরা বিশ্বাস করি সবাইকে একসাথে পাবো। ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রটাকে তছনছ করছে। দেশকে বাঁচাতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, দেশ সত্যিই ভীষণ বিপদের মুখে। সবাই ঐক্যবদ্ধ না হলে আরো ভয়াবহ হবে। তবুও সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। জনগণের সামনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য তুলে ধরে সরকারকে বদলিয়ে পরিবর্তিত সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে হবে। জাতীয় সরকারের রুপরেখা ঠিক করতে হবে। সেটা কি নির্বাচনের আগে নাকি পরে হবে?
সাইফুল হক বলেন, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো আগামীতে আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচনের দায় দেশের মানুষ বহন করতে পারবে না। আরেকটি ব্যর্থ নির্বাচন হলে দেশের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কঠিন। মানুষ আজ ফ্যাসিবাদের পরিবর্তন চায়। এটার দায়িত্ব রাজনীতিকদের। না করলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।