বর্তমান ভোটার তালিকা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : খালেদা জিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। তাদের ভোটার তালিকায় গন্ডগোল ও অনিয়ম আছে। স্বামীর নাম মিললে বাপের নাম মিলে না, বাপের নাম মিললে স্বামীর নাম মিলে না। এরকম ভোটার তালিকা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রংপুর বিভাগের আট জেলার নেতাদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেখবো সরকার সংবিধান পরির্বতন করে কিনা।
এসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগেভাগে টিকিট কেটে রাখুন। কারণ পরে টিকিট কাটারও সময় পাবেন না।
সরকার বিরোধীদলের আন্দোলনকে দমানোর জন্য বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রস্তুত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাও জনগণকে প্রস্তুত করছি কিভাবে আন্দোলন সফল করতে হয়।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে, তার একটা আশ্রয় খুঁজছে। বিএনপি হচ্ছে সেই আশ্রয়স্থল। রংপুর ও রাজশাহী জনসভাই তার উদারণ। আমরা আমাদের জনসভার রেকর্ড ভেঙ্গেছি। এসব মানুষকে ধরে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বিরোধীদলের রাজনৈতিক বড় কর্মসূচি দেখলেই সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করতে চায়, কিন্তু পারবে না। কারণ বাংলাদেশ মানুষ গণতন্ত্রমনা। তারা একদলীয় নয়, বহুদলীয় গণতন্ত্র চায়। এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
উদারণ হিসেবে তিনি বলেন, ভোলা, বাক্ষ্মবাড়ীয়া ও কিশোরগঞ্জ উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন আমরা কোনো প্রার্থী দেইনি, কিন্তু তাদের বিপক্ষে যারা প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচনে তাদের ভোটারা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেনি। এমনকি এজেন্টদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রী নয়, তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাই আমি বলবো, সকল কিছু তার অধীনে। বিচারকরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না। প্রশাসন কোনো কাজ করতে পারবে না সরকারের হুকুম ছাড়া। প্রধানমন্ত্রী যদি চেয়ারে বসে থাকেন ডিসি এসপি কি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কোনো কাজ করতে পারবেন? যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হয় তা হলে কারো কথা শুনতে হবে না। সেই জন্যই আমরা নিরপেক্ষ সরকার চাচ্ছি।
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা সংবিধানের কথা বলেন। সংবিধান তারা নিজেদের মত করে পরির্বতন করেছে। এমনভাবে পরির্বতন করেছে যেন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি।
সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘গতানুগতিক রাজনীতির পরির্বতন করে নতুন ধারার রাজনীতি করতে হবে। সরকারে গেলে যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য স্থানে রেখে নতুন ধারার সরকার গঠন করবো। যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নতুন ধারার দল গঠন করবো। অনেকই ভাবেন দলে কেউ যোগ দিলে তার পদ চলে যেতে পারে । এরকম ভাবলে চলবে না, কেউ আসতে চাইলে তাদের সুযোগ দিতে হবে।
এসময় রংপুরে খালেদা জিয়ার জনসভাকে সফল দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন থেকে আমাদের কাজ হবে। জনগণের এই প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। আমরা মানুষের কাছে কম যাই, এখন থেকে সবার কাছে যেতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, রংপুর জেলা বিএনিপর আহ্বায়ক মোজ্জাফফর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শিরিন ভরসা, বিএনপির সদস্য এজেডএম রেজওয়ানুল হক, জেড এ মর্তুজা চৌধুরী তুলা, স্থানীয় নেতা অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সভাপতি মাজাহার আলী, দিনাজপুর জেলা সভাপতি আখতারুজ্জামান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মুকুল চৌধুরী, নিলফামারী জেলা সভাপতি আলমগীর সরকার, সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান, সৈয়দপুর জেলা সভাপতি আমজাদ আলী সরকার, সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি তাসভীর উল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা, লালমনিরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলা, গাইবান্ধা জেলা সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু, সাধারণ সম্পাদক গউছুল আজম ডলার, ঠাকুরগাঁও জেলা সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম, জাসাস উপদেষ্টা শিল্পী বেবি নাজনীন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদসহ প্রায় শতাধিক সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু।
এসময় রংপুর জনসভা থেকে ফেরারা পথে দুর্ঘটনায় নিহত বিএনপি নেতা আবেদ আলী ও বুলবুলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন খালেদা জিয়া।