বরিশালের মাটিতে আর নয় নাশকতা ॥ হিরণ
খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশাল নগরীতে হরতাল বিরোধী সমাবেশে সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট শওকত হোসেন হিরণ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রনের পরেও হরতাল প্রত্যাহার না করে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রমান করেছেন তিনি সংলাপে বসতে চান না। তিনি দেশের জনসাধারনের জীবন নিয়ে খেলতেই বেশি পছন্দ করেন। হিরণ বিএনপি-জামায়াতকে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, বরিশালের মাটিতে হরতালের নামে আর কাউকে নাশকতা করতে দেয়া হবে না। বিগত দিনে মেয়র থাকাকালীন সময় যেমন বরিশালবাসীর জানমালের নিরাপত্তা দিয়েছি, আজ থেকে মেয়র না হয়েও একজন সাধারন জনগন হিসেবে সেই কাজই করে যাব। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারন করে আরো বলেন, হরতালের নামে বরিশালে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আজ থেকে কেউ আর মহাজোটের নেতা-কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পাবেন না। তিনি দেশকে জঙ্গীবাদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সর্বস্তরের জনগণকে রাস্তায় নেমে আসারও আহবান করেন।
বিএনপি, জামায়াতসহ ১৮ দলের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার সকালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ মহাজোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে হরতাল বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলের পূর্বে নগরীর সোহেল চত্বরস্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সম্মুখে অনুষ্ঠিত সমাবেশে হিরণ আরো বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বরিশালে যে উন্নয়ন হয়েছে তার ধারা অব্যাহত রাখাসহ রক্ষা করতে বরিশালবাসীকে জঙ্গীবাদ ঠেকানোর জন্য এখনই মাঠে নামতে হবে। যারা হরতালের নামে ভাংচুর ও নাশকতা করছে তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে হবে। বরিশালের মাটিতে আর কোন সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের স্থান দেয়া হবে না বলেও তিনি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজালুল করীম, মহানগর যুবলীগের আহবায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার, নাহিদ সেরনিয়াবাত সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। শেষে নগরীতে একটি হরতাল বিরোধী মিছিল বের করা হয়। মিছিল থেকে হরতালের নামে তান্ডব ও অরাজকতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়া হয়। পরবর্তীতে (মিছিল শেষে) মহাজোটের নেতা-কর্মীরা হরতালের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে বরিশালের বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ স্থানে দিনভর অবস্থান নেন। যে কারনে গতকাল সোমবার বরিশালে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সমর্থনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের গৌরনদী উপজেলা শাখার আহবায়ক সৈকত গুহ পিকলুর উদ্যোগে গতকাল সোমবার সকাল থেকে দিনভর সড়ক পথে বরিশালের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে বাটাজোর পর্যন্ত মহাসড়কে নেতা-কর্মীদের দিয়ে পাহারা বসানো হয়েছিলো। মহাসড়কের অপরপ্রান্তে উজিরপুর ও বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দিনভর হরতাল বিরোধী মোটরসাইকেল মহড়া দেয়ার ফলে হরতালের দ্বিতীয় দিনে বরিশালের রাজপথে নামতে পারেনি হরতাল সমর্থনকারী পিকেটাররা। একইদিন বিকেলে নগরীতে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে, সকালে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ.এম জয়নাল আবেদীন ও সাধারন সম্পাদক মোঃ হারিছুর রহমান হারিছের নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে বরিশাল নগরীতে সোমবার ভোরে হরতালের পক্ষে মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল এবং বরিশাল সদর উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টুর নেতৃত্বে পৃথক তিনটি মিছিল অনুষ্ঠিত হলেও বেলা বাড়ার পর নগরীতে ১৮দলের কোন নেতা-কর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। এদিকে দুরপাল্লার রুটের বাস চলাচল না করলেও বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। একইসাথে অভ্যন্তরীন নৌ-রুটের লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বিএমপি) মোঃ শামসুদ্দিন জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে নগরীর বিশেষ এলাকাগুলোতে পাঁচ’শ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাবের একাধিক টহল দল কাজ করছে।