বন্ধ হচ্ছে অ-নিবন্ধিত মোবাইল সেট, যেসব নিয়ম জানা জরুরি
বন্ধ হচ্ছে অ-নিবন্ধিত মোবাইল সেট, যেসব নিয়ম জানা জরুরি
দেশে শুক্রবার, ১ অক্টোবর-২০২১ থেকে অবৈধ বা অনিবন্ধিত মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি এর আগে একাধিকবার এই সময়সীমা নির্ধারণ করলেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে ১ অক্টোবর থেকে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিটিআরসির স্পেকট্রাম ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদুল আলম।
বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, অবৈধ হ্যান্ডসেট যেগুলো ছিল, গত তিন মাস সেগুলোর ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক সময় ছিল। সেই সেটগুলো যাচাই করে সেসব নম্বরে এতদিন টেক্সট পাঠানো হয়েছে যে সেগুলো অবৈধ। তবে শুক্রবার থেকে কার্যকর হলেও অনিবন্ধিত ফোন সেট বন্ধ করার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে আরো সময় নিয়ে পদক্ষেপ নেবে বিটিআরসি। যেন মানুষজন এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হতে পারে।
১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধ ফোন সেটের জন্য ‘পরীক্ষামূলক সময়’ ছিল, বলছে বিটিআরসি। সংস্থাটি আরো বলছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যেসব সেট অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলো অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এই সেটগুলোর বিষয়ে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে মেসেজের মাধ্যমে জানানো হবে।
বিটিআরসির অনুমোদন না নিয়ে যেসব মোবাইল ফোন আমদানি করা হয়েছে বা বাংলাদেশের ভেতরে অ্যাসেম্বল করার পর নিবন্ধন করা হয়নি, সেসব সেট অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি সাড়ে ৮ লাখ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ সেটকে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে এসব অবৈধ সেট ধাপে ধাপে ‘ডিঅ্যাকটিভেট’ বা বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু করবে বিটিআরসি।
অবৈধ সেট বন্ধ করা হবে যেভাবে
বিটিআরসি কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, ১ অক্টোবর থেকে অবৈধ সেট বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করলেও ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এই প্রক্রিয়ার কার্যক্রমও ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এই কার্যক্রম পরিচালনায় টেলিকম অপারেটরগুলো বিটিআরসির সাথে কাজ করবে।
শহিদুল আলম বলেন, আমরা শুক্রবার থেকে চালু থাকা অবৈধ ফোনসেটে টেক্সট মেসেজ পাঠানো শুরু করবো। কিন্তু অনেকেই হয়তো সেই মেসেজ কয়েকদিন পরে দেখবে, বা খেয়াল করবে না। ব্যবহারকারীরা যেন আস্তে আস্তে বিষয়টিতে অভ্যস্ত হতে পারেন, এজন্য এই কার্যক্রমও আমরা পরীক্ষামূলকভাবে করবো।
এই সময়ে টেক্সট মেসেজ পাঠানোর পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে অবৈধ সেট বন্ধ করার কার্যক্রমও চালু থাকবে বলে জানান শহিদুল আলম।
তিনি বলেন, অনিবন্ধিত সেট হলে সেটিতে সিম ঢুকানোর সাথে সাথে মেসেজ যাবে যে সেটটি অনিবন্ধিত। ওই মেসেজে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটটি রেজিস্ট্রার করার নির্দেশনা দেয়া থাকবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটটি নিবন্ধন না করলে সেটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
অবৈধ সেট সম্পর্কে সতর্ক করার পর কতক্ষণ বা কতদিনের মধ্যে একটি সেট বন্ধ করা হবে- এবিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলেও জানান শহিদুল আলম। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কারণ বন্ধ করার আগে একটি সেট যাচাই করতে ও তা আসলেই অনিবন্ধিত কি-না, তা যথেষ্ট সময় নিয়ে নিশ্চিত হয়েই সেটি বন্ধ করার পরিকল্পনা বিটিআরসির।
বিটিআরসি বলছে, এই নিয়ম কার্যকর হলে ছিনতাই করা সেট কেনা-বেচা করা বন্ধ হবে এবং সেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ব্যবহৃত সেটের ক্ষেত্রে কী হবে?
বিটিআরসি কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, একজন ব্যবহারকারী একবার সেট রেজিস্ট্রার করার পর যদি সেটি অন্য কাউকে বিক্রি করতে চান তাহলে সেটি ‘ডি-রেজিস্ট্রার’ করে বিক্রি করতে হবে। এই নিয়ম কার্যকর হলে ব্যবহৃত সেট কেনার ক্ষেত্রেও মানুষ চোরাই সেট কিনতে পারবে না। নিবন্ধিত সেটই কিনতে হবে। কিন্তু একজন ব্যবহারকারী যখন তার ব্যবহারের সেট বিক্রি করবে, তখন তার সিম থেকে ওই সেটটি ‘ডি-রেজিস্ট্রার’ করতে হবে।
মানুষ যেন এই ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হতে পারে, এ লক্ষ্যে নিয়মটিও ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা বিটিআরসির।
একটি সেট যেহেতু একজন নির্দিষ্ট সিম দিয়ে ব্যবহার করতে পারবে, কাজেই ওই সেটটি আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে হলে সেটি ‘ডি-রেজিস্ট্রার’ করা জরুরি। ‘ডি-রেজিস্টার’ করা হলে সেটিতে নতুন সিম ঢুকানোর পর তা নতুন করে রেজিস্ট্রার করা সম্ভব হবে ও নতুন একজন ব্যবহারকারী সেটটি বৈধভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
বিদেশ থেকে ব্যক্তিগতভাবে আনা সেটের ক্ষেত্রে কী হবে?
বিটিআরসির স্পেকট্রাম ডিভিশনের মহাপরিচালক শহিদুল আলম জানান, বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় দেশী বা বিদেশী যেকোনো নাগরিক ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ আটটি সেট নিয়ে আসতে পারবেন। এই আটটি সেটের মধ্যে দু’টির জন্য কোনো কর দেয়া লাগবে না। বাকি ছয়টির জন্য কর দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো কর না দিয়ে দু’টি সেট যে কেউ নিয়ে আসতে পারবে।
এই সেটগুলো নিবন্ধন করতে পাসপোর্ট নম্বর ও যাত্রীর বোর্ডিং পাস প্রয়োজন হবে বলে জানান শহিদুল আলম।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আনা সেটে বাংলাদেশের যেকোনো অপারেটরের সিম ঢুকালে যাচাই-বাছাইয়ের পর বিটিআরসি থেকে ওই সিমে একটি মেসেজ পাঠানো হবে, যে সেটটি অনিবন্ধিত। তখন পাসপোর্ট নম্বর ও বোর্ডিং পাসের মাধ্যমে অনলাইনে ওই সেটটি নিবন্ধন করা যাবে।
বৈধ নিয়ম অনুযায়ী, একটি পাসপোর্ট নম্বর ও বোর্ডিং পাস ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ থেকে দেশে আনা সর্বোচ্চ আটটি সেট নিবন্ধন করা যাবে, যার মধ্যে দু’টি সেটের ক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হবে না।
বিটিআরসি বলছে, মোবাইল সেট নিবন্ধনের এই পরিকল্পনার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ সাধারণ মানুষকে সব ধরনের সরকারি সেবা সহজে প্রদান করা। সংস্থাটির কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, বর্তমানে অনেক ধরনের সরকারি সেবা সিমের মাধ্যমে ও মোবাইলের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু সিমের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সিম ও সেট একসাথে সংযুক্ত করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক কমে যায়। এর ফলে একজন ব্যক্তি সরকারি ও নাগরিক সেবাগুলো একটি সিম ও একটি সেটের সাহায্যে সহজেই পেতে পারবো।
পাশাপাশি এই নিয়ম বাস্তবায়িত হলে ব্যবহারকারীরা ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবেন, চোরাই ফোন বেচাকেনা বন্ধ হবে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং দেশীয় মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বল শিল্প লাভবান হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
সূত্র : বিবিসি