বদলে যাচ্ছে বিএনপির গঠনতন্ত্র, তারেককে কো-চেয়ারম্যান করার চিন্তা

23/01/2016 1:02 pmViews: 7
বদলে যাচ্ছে বিএনপির গঠনতন্ত্র
তারেককে কো-চেয়ারম্যান করার চিন্তা
 
বদলে যাচ্ছে বিএনপির গঠনতন্ত্র

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। দলকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নেতৃত্বের বিকাশে বাধা অপসারণে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন-পরিমার্জনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। এসব পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ বিলুপ্ত করা কো-চেয়ারপারসন পদ সৃষ্টি করে তারেক রহমানকে সে পদে নেয়া, ঢাকা মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্তি করণ, ‘এক নেতা এক পদ’ প্রভৃতি। এসঙ্গে ’ভারপ্রাপ্ত’ মুক্ত হবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠসূত্র জানায়, মাঠ নেতাদের অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আরেক ধাপ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হবে। খালেদা জিয়াও এ ব্যাপারে একমত। তিনিও চাচ্ছেন তার অবর্তমানে দলের হাল ধরবেন তারেক রহমান। গত কাউন্সিলেই এ পদ সৃষ্টি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু কয়েকজন সিনিয়র নেতার আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তবে এবার আর সে ধরনের বাধা থাকছে না। তারেক রহমানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে গত কাউন্সিলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে শুধু সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। মূলত কোনো কারণে খালেদা জিয়া দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পরবর্তী সময়ে যেন তারেক রহমান সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এমন চিন্তাভাবনা থেকেই ওই পদ সৃষ্টি করা হয়। তার আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০২ সালের ২২ জুন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ দেয়া হয় তারেক রহমানকে।

বর্তমানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কেউ নেই। তারেক রহমান এই পদ থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হলে তখন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ১৬ মার্চ বিএনপির তত্কালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিবের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এখন ‘সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব’ পদটি পাওয়ার মত যোগ্য বলে কাউকে মনে করছে না বিএনপি। ফলে এই পদটির ভাগ্যে ‘বিলুপ্তি’লেখা হতে পারে। এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১১ সালের ১৬ মার্চ থেকে ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। সবক্ষেত্রে মহাসচিবের মতো দায়িত্ব পালন করলেও আজ পর্যন্ত ভারমুক্ত করা হয়নি তাকে। তাকে ভারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে অনেক আগেই।

এদিকে বিএনপির তৃণমূল নেতারা এবং বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, রাজপথে বিগত দুইটি বড় আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য বেশি দায়ী ঢাকা মহানগর বিএনপির ব্যর্থতা। ফলে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মহানগর কমিটি উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করলে দল উজ্জীবিত হবে। আন্দোলনে প্রতিযোগিতা আসবে। দল গতিশীল হবে।

প্রসঙ্গত ঢাকায় আন্দোলন তীব্র করে সরকারের পতন ঘটানোর জন্য সাদেক হোসেন খোকাকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের হাইপ্রোফাইল আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের জন্য কমিটিকে এক মাসের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি। কোন আন্দোলনে তারা মাঠে নামেনি। প্রায় দুই বছরে থানা-ওয়ার্ড কমিটিও হয়নি। বিএনপির মাঠ নেতারা চেয়ারপার্সনকে বলেছেন, রাজধানীর নেতৃত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে কর্মীরা প্রতিযোগিতা করে মাঠে নামতো। তবে একক নেতৃত্বের কারণে তা সম্ভব হয়নি। মহানগর কমিটি নামে আদৌ কোনো কমিটি আছে কিনা-তা নিয়ে সন্দিহান খোদ কমিটির নেতাকর্মীরা। দলের মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম জানান, কমিটি পুনর্গঠনের কার্যক্রম থেমে আছে। কোনো অগ্রগতি আছে কিনা তা আমরা কমিটির সদস্যরা জানি না। ফলে পদপদবীর জন্য যারা লবিং করছিলেন, সক্রিয় ছিলেন তারা হতাশ।

জানা গেছে, আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিএনপি। তবে বাধার মুখে কাউন্সিল না করতে পারলে দলের চেয়ারপার্সন তার উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে নিজেও সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারবেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির পঞ্চম কাউন্সিল। সর্বশেষ ওই কাউন্সিলে দলটির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়। নির্বাহী কমিটির সদস্য ২৫১ থেকে বাড়িয়ে ৩৮৬ করা হয়। এ ছাড়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পরপর

কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। অথচ সাড়ে পাঁচ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। ২০১৪ সালের শুরুতে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় তা সম্ভব হয়নি। সবকিছু ঠিক থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগে কাউন্সিল করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

এদিকে আজ শনিবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।  রাত সাড়ে ৮টায় খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে জাতীয় কাউন্সিলের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা, দলের পুনর্গঠন নিয়ে পরবর্তী করণীয়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং জোটের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

Leave a Reply