বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন, সংসদে সমাপণী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন,
সংসদে সমাপণী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী
চলতি একাদশ সংসদের দশম অধিবেশনের গতকাল বৃহস্পতিবার সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর ইতিহাস থেকে তার নাম পর্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তার ঐতিহাসিক ভাষণসমূহ এমনকি নাম পর্যন্ত কোথাও রাখা হতো না। বরং আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- পাকিস্তানের শাসনপদ্ধতি ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনবব্যস্থা দিয়ে বাংলার মানুষের ক্ষমতায়ন হবে না। জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এবং দেশকে দ্রুত স্বাবলম্বী করে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করেন। দেশে উত্পাদন বৃদ্ধি এবং দেশকে সমৃদ্ধ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ করেন। সেজন্য সংবিধানে যে সংশোধনী এনেছিলেন- সেটা সম্পর্কে জনগণের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সঠিকভাবে জানার সুযোগ হয়নি। বরং নানা অপবাদ দিয়ে সেসময় বলা হয়েছিল- বঙ্গবন্ধু দেশে একনায়কতন্ত্র-রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছেন। এরকম নানা অপপ্রচার চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেটি অধিবেশনকক্ষে প্রচার করতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর প্রতি অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে ঐতিহাসিক নানা স্থিরচিত্রসহ বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের অডিও প্রচার করা হয় অধিবেশন কক্ষে। প্রধানমন্ত্রীসহ উপস্থিত সকল সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটি শোনেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাতীয় সংসদ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে জাতির পিতার প্রতি বিনশ্র শ্রদ্ধা জানাতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৯ নভেম্বর কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে যে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, গত রবিবার সংসদে তা সর্বস্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
’৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি সংসদে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি প্রচারের অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার সেই ভাষণটি আমরা এখানে শুনতে চাই। সমগ্র জাতির এটা শোনা দরকার। কী লক্ষ্যে, কী উদ্দেশ্যে, কী কারণে জাতির পিতা এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন- তা সবার জানা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কেন ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে যাবেন! তিনি তো চাইলে বারবার মন্ত্রী হতে পারতেন! যেই মানুষটি সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নিজের আরাম-আয়েশের দিকে কখনও তাকাননি- তিনি কেন ক্ষমতা কুক্ষিতগত করবেন! তার সারাজীবনের স্বপ্নই ছিল একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ দিয়ে যাওয়া।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু দেশ স্বাধীন করেননি, তার স্বপ্ন ছিল মুক্তিযুদ্ধে দেওয়া ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ বা-বোনের ইজ্জত যেন বৃথা না যায়। একটি শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। শুধু স্বাধীনতাই দেননি, মাত্র নয় মাসে একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। এত অল্প সময়ে সংবিধান দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছ্যন্দ দেখেননি, সন্তানদের আরাম-আয়েশের কথা কখনও ভাবেননি। তার সারাজীবনের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সোনার বাংলা গড়ে তোলা। যেখানে সবাই পেট ভরে খেতে পারবে, সন্তানরা লেখাপড়া করবে ও খেলবে, সবার চিকিত্সা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা থাকবে, সবাই হাসবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, মুজিববর্ষে এই বিশেষ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমি প্রস্তাব আনার সুযোগ পেয়ছি। এটা আমার জন্য বিরল সম্মান। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ায় তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান
সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর ধাক্কা শুরু হয়েছে। সেজন্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। টিকার জন্য আগাম বুকিং দেওয়া হয়েছে। টিকা যেন দ্রুত আনা যায়, সরকার সেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, যেহেতু পুনরায় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে সেজন্য সবাইকে অুনরোধ জানাবো- মুখে মাস্ক পরুন, হাল্কা গরম পানি পান করুন, গরম পানি দিয়ে গার্গেল করুন, হাত-মুখ পরিস্কার রাখুন, ঘর-বাড়ি পরিস্কার রাখুন, নিজেদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
প্রধানমন্ত্রীর আগে দেওয়া সমাপনী বক্তব্যে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, এনিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথাও বলেছি। আমেরিকাতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবার বন্ধ করতে তারা বাধ্য হয়। আমাদের এখানেও করোনার প্রাদুর্ভাব আবার বাড়ছে। কাজেই শিক্ষার্থীদের তো আমরা মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।
অধিবেশন শেষ
প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্য শেষে ’৭৫ এর ২৫ জানুয়ারি সংসদে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারের পর অধিবেশন সমাপ্ত হয়। এই দশম অধিবেশনটি শুরু হয় গত ৮ নভেম্বর। গতকাল ১০ কার্যদিবসের মধ্য দিয়ে এটি শেষ হয়। এরমধ্যে ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে ৯ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল বিশেষ অধিবেশন। ৯ নভেম্বর সংসদে স্মারক বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এবারের অধিবেশনে মোট নয়টি বিল পাস হয়েছে।