জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
সোমবার ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় ও আশেপাশের এলাকায় জমায়েত হতে থাকে।
সকালে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি।
জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে আজ সকাল সাড়ে ছয়টায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পক্ষে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। তারাও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে দলের সভাপতি হিসেবেও শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ১৪ দল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি প্রমুখ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির ভেতরে যান। সেখানে ঘুরে ঘুরে তার পিতার স্মৃতিচিহ্ন পরিদর্শন করেন এবং সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় কাটান তিনি। এরপর তিনি বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওনা হন।
সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণায় ভরে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক। হাতে কালো ব্যানার ও বুকে কালোব্যাজ পরিধান করে নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। সকলেই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে জাতির পিতাকে স্মরণ করে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানায়। শোকাবহ ভাবগাম্ভীর্যের মাঝে জোরালো কন্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।’ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেন তারা ।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময়ে মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ১৪-দল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পরে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এ ছাড়াও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ এবং সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
সকাল সাড়ে সাতটায় বনানী কবরস্থানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রীসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাদের কবরে ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। এরপর পবিত্র ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও তথ্য মন্ত্রণালয়, পিআইবি, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, মহিলা শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতীলীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন শ্রমিক-কর্মচারী লীগ, গণপূর্ত শ্রমিক লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সমš^য় পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন।-বাসস।