ফোনে আড়ি পাতবে কলকাতা পুলিশ

03/02/2014 8:57 pmViews: 9

ফোনে আড়ি পাতবে কলকাতা পুলিশ
এডওয়ার্ড স্লোডেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক এই কর্মকর্তা বিশ্বের নানা দেশে ফোনে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নজরদারি তথ্য প্রকাশ করে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। ব্যক্তি স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করায় তোড়পাড় ওঠে সারা বিশ্বে। যুক্তরাষ্ট্রকে যার খেসারত দিতে হয়েছে সমালোচনা আর ধিক্কার শুনে। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনয়ন হয়ে। বন্ধুদেশগুলোতে বাধ্য হয় ফোনে ও নেটে আড়িপাতা বন্ধ করতে।

এবার সেই পথেই হাঁটছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা সোমবার অনলাইন সংস্করণে জানিয়েছে, টেলিফোনে আড়ি পাতা ও ইন্টারনেটে নজরদারির ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে পুলিশের জন্য ১৫ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়াতে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে মাওবাদী তৎপরতা কমলেও একেবারে নির্মূল হয়নি। এখন আবার কেএলও জঙ্গিরা নতুন করে উত্তরবঙ্গে সক্রিয় হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্রিয়তা ও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা। তাছাড়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও চলছে। ফলে নজরদারি ব্যবস্থা আরো বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, এই নজরদারি ব্যবস্থা আসলে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হবে। ঘটনাচক্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন তিনিও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তার ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ তুলতেন। তা নিয়ে তখন পানি ঘোলাও কম হয়নি। তৃণমূলের তরফে অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সরকার বিরোধীদের ওপরে নজরদারিতে বিশ্বাস করে না। কোন পরিস্থিতিতে, কীভাবে কারো ফোনে বা ইন্টারনেট সংযোগে আড়ি পাতা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। ‘ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইন ১৮৮৫ অনুযায়ী দেশের নিরাপত্তা, একতা, সার্বভৌমত্ব, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা এবং সেই সঙ্গে অপরাধমূলক কাজকর্ম প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এই কাজ করা যেতে পারে। তবে আড়ি পাততে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অথবা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুমতি নিতে হবে।

স্বরাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য, রাজ্যের ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির কথা মাথায় রেখে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে একটি ব্যবস্থা (সিস্টেম) তুলে দেওয়া হচ্ছে, যার পোশাকি নাম ‘ল’ফুল ইন্টারসেপশন ইউনিট এন্ড কম্যান্ড সেন্টার’। এটি আড়ি পাতার একটি আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। কলকাতা পুলিশের কাছে এমন একটি ইউনিট আগে ছিল। কিন্তু এখন একটি উন্নততর ইউনিট কিনতে চায় তারা। যে সংস্থাটি সেনাবাহিনী এবং রিসার্চ এন্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-কে এমন ইউনিট সরবরাহ করে, তারাই কলকাতা পুলিশকে আড়ি পাতার এই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে। এর বাইরে এসটিএফের জন্য একটি ‘জিএসএম-মোবাইল ফোন লোকেটর’-ও কেনা হচ্ছে। এতে যে কোনো জিএসএম মোবাইলের নম্বর দিলেই সেটির অবস্থান ফুটে উঠবে। কেনা হবে সারা দিনের টেলি-কথোপকথন রেকর্ডের যন্ত্র ‘১৬-চ্যানেল ভয়েস লগার উইথ ল্যাপটপ’ ও ইন্টারনেট ব্যবহারে টানা নজরদারির জন্য ‘পোর্টেবল ইন্টারনেট মনিটরিং সিস্টেম’।

এসটিএফের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ই-নজরদারি ব্যবস্থাও সাজানো হচ্ছে।

Leave a Reply