ফের জামায়াতের তাণ্ডব জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, ৬ পুলিশসহ আহত ৩৩

23/09/2013 6:33 pmViews: 12

1-rajdhaniডেস্ক : দেশজুড়ে জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সোমবার রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ৬ পুলিশসহ অন্তত ৩৩ জন আহত হয়েছেন।

রাজধানীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পুলিশসহ ১২ জন । রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড ও নীলক্ষেত এলাকায় এ সংঘর্ষ ঘটে। জামায়াত ও শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বোমা ছুড়ে মারে এবং ২০/৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ২টার দিকে ২০/২৫ শিবিরকর্মী এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকার পাশের গলি থেকে বের হয়ে মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক আবদুল হালিম খান সঙ্গীয় পুলিশসহ দায়িত্ব পালন করছিলেন। শিবিরকর্মীরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। এতে তারা আহত হন। এ সময় এলিফ্যান্ট রোড বাটা সিগন্যাল ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এলে শিবিরকর্মীরা দ্রুত আশপাশের গলিতে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি ইয়াসির আরাফাত জানান, এর কিছুক্ষণ পরই নীলক্ষেত এলাকায় একদল শিবিরকর্মী মিছিল বের করে। তারা ১৫/২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ ধাওয়া করলে তারা ২৫/৩০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ওসি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

এছাড়া রাজশাহী, চাঁদপুর, সিলেট ও ফরিদপুরে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২১ জন আহত হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের ভাঙচুর, ইটপাটকেল ও ককটেল বিস্ফোরণের জবাবে কয়েক রাউন্ড গুলি এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় চাঁদপুর ও সিলেট থেকে ২১ জন শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :

রাজশাহী :সোমবার রাজশাহীর সাহেববাজার গণকপাড়া এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। শিবিরের ছোড়া হাত বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে জানে আলম ও জাহিদুল ইসলাম নামের দুই কনস্টেবল আহত হন বলে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান। ওসি বলেন, বেলা ১১টার দিকে গণকপাড়া এলাকায় জড়ো হয়ে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়। মিছিল শুরুর আগেই পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ২টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। এ সময় পুলিশ পাল্টা রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

চাঁদপুর : শহরের আন্তঃজেলা বাসস্ট্যান্ডে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ১৪ রাউন্ড গুলি ও এক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় আটজন আহত হন এবং ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিবিরকর্মীকে আটক করে পুলিশ।সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে সংবাদদাতা জানান, দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের স্বর্ণখোলা রোড থেকে প্রায় শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এলে তারা ১৫ থেকে ২০টি ককটেল ফাটায় এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে ও এক রাউন্ড টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

সিলেট : মহানগরের বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশের ওপর আকস্মিক হামলা চালায় শিবির। এ সময় শাহপরাণ থানার হুমায়ূন কবীর নামের এক এসআইকে মারধর করে তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে শিবির ক্যাডাররা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী একটি ট্রাকসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে শিবির ক্যাডাররা। পরে পুলিশ এলে তারা পালিয়ে যায়।সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দোপাদিঘির পাড়ে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিবির। শিবিরের ৬০-৭০ জন নেতাকর্মীর ওই ঝটিকা মিছিলটি দোপাদিঘি থেকে বন্দরবাজারের দিকে এগুচ্ছিল। তারা করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনে এসে শাহপরাণ থানার এক এসআইকে একা পেয়ে হামলা চালায়। শিবির নেতাকর্মীরা ওই এসআইকে মারধর করে তার মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শিবির নেতাকর্মীরা জেল রোড ও সোবহানীঘাটের দিকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে সুনামগঞ্জ জেলার শিবিরের সাবেক সভাপতিসহ ১৬ শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। সিলেট এসএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহম্মদ আয়ূব জানান, এ পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করা হয়েছে। হামলাকারীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান আয়ূব।

ফরিদপুর : জামায়াত-শিবিরের হামলায় ফরিদপুরে পুলিশের এক সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সোমবার বিকালে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ফরিদপুর জেলা শহরের জনতা ব্যাংকের মোড় থেকে মিছিল বের করে। হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের বেইলি ব্রিজের কাছে মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে পুলিশের অপর একটি দল মিছিলকারীদের ধাওয়া দিলে শিবিরকর্মীরা পুলিশ সদস্য সুশীলের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের ইটের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জামায়াত নেতা প্রফেসর আবদুত তাওয়াবসহ আটজনকে আটক করে।

Leave a Reply