ফাঁসির পর কী ঘটে ?
নিউজ7 বিডিঃ গত ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। ফাঁসি কীভাবে দেয়া হয়, সেটা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু ফাঁসির সময়ে আসলে কি ঘটে, কিংবা কীভাবে মানুষটি মারা যায় সেটা হয়তো জানি না। একজন ফাঁসির আসামী কীভাবে মৃত্যুবরণ করে- সেই ব্যাপারটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানার আগ্রহ হয়েছে যাদের, কেবল তাদের জন্যই এই পোষ্ট। -আমাদের প্রায় সবারই ধারণা যে, গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যুবরণ করলে মৃত্যু কারণ হল শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে নিঃশ্বাস নিতে না পারা। কিন্তু ব্যাপারটি আদতে তা নয়। ফাঁসির সময় দড়ির চাপে ও জিহ্বা পেছনে পড়ে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটায় ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু তরান্বিত করতে শ্বাসনালী বা নিঃশ্বাসের ভূমিকা খুবই কম। এক্ষেত্রে যে সকল বিষয় মূলত মৃত্যুর কারণ হতে পারে তার প্রথমেই রয়েছে রক্তনালিকার রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া। -আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত সংবহন করে ক্যারোটিড আর্টারি। ফাঁসির সময় এই আর্টারি বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্ক তার প্রয়োজনীয় পরিমান রক্ত ও অক্সিজেন পায় না বলে মাত্র ১০-১৫ সেকেন্ডের মধ্যে “কোমা”র মত অবস্থার সৃষ্টি হয় ও মৃত্যু তরান্বিত হয়। আবার মস্তিষ্ক থেকে দূষিত রক্ত হৃৎপিন্ডে নিয়ে যায় জুগুলার ভেইন। ফাঁসির দড়ি এই ভেইনের রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয় বলে মস্তিষ্কে জমা হয় এই দূষিত রক্ত- আর তার হাত ধরেই এগিয়ে আসে মৃত্যু। -ফাঁসির সময় মৃত্যুর আরেকটি কারণ হল ভেগাস নার্ভের উপর চাপ। শরীরের ওজন গলায় বাঁধা দড়িতে যে চাপ সৃষ্টি করে তাতে ভেগাস নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি হয়; এই ভেগাস নার্ভ আমাদের হৃৎপিন্ডসহ আরও বিভিন্ন অঙ্গকে সচল রাখে। এর উপর চাপ পড়লে এর কাজের সাথে সাথে এই নার্ভ সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোও অচল হয়ে যায়। উপরের প্রক্রিয়াগুলো প্রায় সব ধরণের ফাঁসিতেই হয়ে থাকে। তবে আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি ছিল জুডিশিয়াল বা বিচারিক ফাঁসি। বিচারিক ফাঁসিতে মৃত্যুর কারণ একটু ভিন্ন। এইরকম ফাঁসিতে আসামীর পায়ের নিচে একটি প্ল্যাটফরম রাখা হয়, কিংবা আসামী যেখানে দাঁড়িয়ে থাকে সেই পাটাতন হুট করে সরিয়ে দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হয়। অর্থাৎ গলায় ফাঁস পড়িয়ে পায়ের নিচ থেকে শক্ত অবলম্বন সরিয়ে নেয়া হয়। তো এই প্ল্যাটফরমটি সরিয়ে দিলে হঠাৎ করেই আসামীর শরীরের প্রচন্ড ওজন তার গলার ওপর পড়ে ফলে তার মেরুদন্ডের দ্বিতীয় কশেরুকার হাড়ের একটি অংশ (এই বিশেষ অংশটি উঁচু হয়ে মেরুদন্ডের প্রথম হাড়ের ভেতরে মস্তিষ্কের কাছাকাছি অংশে ঢুকে থাকে- এই অংশের নাম “ওডোন্টয়েড প্রসেস” যা মেরুদন্ডের অন্য কোন হাড়েই থাকে না) ভেঙে যায়। এই ভাঙা অংশ মস্তিষ্কের একটি অংশে চাপ সৃষ্টি করে; সেই অংশেই মূলত থাকে শ্বসন কেন্দ্র ও হৃৎস্পন্দন কেন্দ্র। সেই কেন্দ্রে চাপ পড়ার প্রায় সাথে সাথেই নিঃশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে আসে আসামীর। জুডিশিয়াল ফাঁসির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২/৩ মিনিট দেহে প্রাণ থাকতে পারে, কোন বিশেষ ক্ষেত্র বা আত্মহত্যার ক্ষেত্রে সময়টা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।