ফসলের ক্ষেতের সর্বশেষ অবস্থা জানাবে ‘ই-ভিলেজ’ মোবাইল অ্যপ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্বল্পতম ব্যয়ে সর্ব্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে ‘ই-ভিলেজ’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য, ফসলের প্রকৃত রোগ যথাযথভাবে নিরুপন করে বিদ্যমান উপাদান ব্যয় কমিয়ে সর্ব্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করতে নতুন এই মোবাইল অ্যপটি চালু করা হবে।
মঙ্গলবার সেন্সর বেসড ডিভাইজ এর মাধ্যমে মোবাইল ফোনে স্মার্ট অ্যাপসের ব্যবহার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে কৃষকের হাতে মোবাইল ফোন বিতরণ করাসহ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি বলেন, ‘কৃষি বান্ধব বর্তমান সরকারের ক্ষুদা ও দারিদ্রমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপান্তরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় এ প্রকল্প বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
চীনা দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান ‘আইসফটস্টোন’, গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিচার্স অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ইতিমধ্যেই প্রজেক্টের কাজ এগিয়ে চলছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের পাজুলিয়া গ্রামে ১৫ জন কৃষকের উপর প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
প্রকল্পটির গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক রশীদুল হাসান বলেন, কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটিয়ে সহজবোধ্য বাংলা ভাষায় ‘স্মার্ট অ্যাপস’ তৈরির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পটি অতীতের সেসব সীমাবদ্ধতাকে জয় করে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি স্মার্ট অ্যাপস তৈরি করা হবে। যা বাংলায় সহজে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী, ছবি ও অডিও ভয়েসযুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কৃষকরা তার জমি ও ফসলের কী অবস্থা তা জানতে পারবে। প্রকল্পের শুরুতে এটি সবজি ক্ষেতে সমীক্ষা চালানো হবে। ধীরে ধীরে তা অন্য ফসলে নিয়ে যাওয়া হবে। কৃষকরা সকালে ফোন সেটটি ওপেন করলেই তাতে একটি বার্তা যাবে, যাতে নির্দেশনা থাকবে তাঁর ক্ষেতের সর্বশেষ কী অবস্থা। একই সাথে করণীয়গুলোও জানিয়ে দেবে কী ধরনের ঔষুধ, সার, পানি বা অন্যান্য উপকরণ দিতে হবে। যদি তারা বাড়ির বাইরেও থাকে যাতে তার কাছে বার্তা যায় সে ব্যবস্থা থাকবে। কৃষকরা তাদের ক্ষেতের জটিল কোনো অবস্থাতে কারও কাছে দারস্থ না হয়ে নিজেই সমাধান করতে পারবেন। স্থানীয় আবহাওয়া ও অন্যান্য উপযোগীতা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ডিভাইস উদ্ভাবন করা হবে।
অধ্যাপক রশীদ আরো বলেন, এই পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে একটি সাশ্রয়ী ডিভাইস নিয়ে আসব, যা কৃষকরা সামর্থ্যরে নাগালে থাকবে। যাতে একজন বা একাধিক কৃষক মিলে ওই ডিভাইসটি কিনতে পারবে। এই ডিভাইসটি নিজ থেকে পিএইচ লেভেল বলে দেবে, ক্ষতিকারক পোকামাকড় আছে কিনা তা বলে দেবে। এই ডাটাগুলো চলে আসবে সার্ভারে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ-সুবিন্যাস করে সফটওয়ার উন্নয়ন করে তা অ্যাপসে যাবে। কৃষিবিদরা ডাটা বিশ্লেষণগুলো করে যথাযথ পরামর্শটা অ্যাপসে যুক্ত করবেন। কৃষকদের কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি পরামর্শটা চলে যাবে।
ই-ভিলেজ প্রকল্পটির গবেষক দলের দাবি, প্রকল্পটি সফল হলে প্রান্তিক কৃষকেরা আর্থিকভাবে ৪০ ভাগ বেশী লাভবান হবে।