প্রায় ৩০০০ মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার : ফখরুল
প্রায় ৩০০০ মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার : ফখরুল
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত ১৩৪ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এর অধিকাংশই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। এদের মধ্যে হয়তো আপনাদের কারো ভাই, বন্ধু, স্বজন প্রতিবেশী আছে। উক্ত ১০ বছর সময়ের মধ্যে এ দেশে জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ। গুম হয়েছে ৬০১ জন মানুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৮০৬ জন নারী। ১৯৩৪ জন শিশু নির্যাতিত হয়েছে, ১৮ জন শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের উপর রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এই চিত্র বলে দেয় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতার স্বদেশ প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যু উপত্যকা, জল্লাদের রঙ্গমঞ্চ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অতি সম্প্রতি মেজর (অব.) সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন মেজরের এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহা’র পরিবার সাহস পাচ্ছে। বিচারপ্রার্থী হতে পারছে। আমরাও মেজর সিনহা হত্যার বিচার চাই, সকল বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের বিচার একদিন এ দেশের মাটিতে হবে সে আস্থা এবং বিশ্বাস রাখি।
তিনি বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে যে, পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই, ক্রসফায়ারে হত্যাকাণ্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠাণ্ডা মাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত? এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে এটাই বলে আসা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, ক্রসফায়ারে সাজানো গল্প মিথ্যা, বানোয়াট, এটা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীলনকশার অংশ। মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিত আমাদের এতদিনের দাবি-অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলো।
বিনাবিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায় না, আমাদের সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের খুন-গুম-অত্যাচার-নিপীড়ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশের ১৯৭৩ এর ধারা-২(২)(ক) এর অধীন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে। তাই আমরা বারবার বলতে চেয়েছি, আজকের আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ওয়াজেদের আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী পথে হেঁটে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই, দেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই, বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ড বন্ধ চাই, সাংবিধানিক শাসন চাই, খুন-গুমের রাজনীতি বন্ধ চাই, সকল বিনাবিচারে হত্যা-গুম-খুনের বিচার চাই।