‘প্রশ্ন ফাঁসকারীদের প্রেমিক-প্রেমিকাও পর্যবেক্ষণে’
সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে প্রশ্নফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত কয়েকজনকে সনাক্ত করার কথা জানিয়ে শিক্ষমন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বুধবার এই সভায় বলেন, “যারা দুষ্টু লোক, অপরাধী, ক্রিমিনাল তাদের প্রতি হুঁশিয়ারি- শুধু তাদের নয়, তাদের বংশধর কারা কারা আছেন, তাদেরও মনিটরিং করা হচ্ছে। বাবা-মা, প্রেমিক-প্রেমিকা কেউ বাদ নেই।”
সাধারণত এসব ‘গোপনীয়’ সভায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার না থাকলেও চলতি বছর ঢালাওভাবে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় সমালোচনায় পড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েক ডজন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই এ সভার আয়োজন করে।
সচিবালয়ে ‘২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা সম্পর্কিত জাতীয় মনিটরিং কমিটির’ এই সভায় ঢাকার অতিরিক্তি পুলিশ কমিশনার (ডিবি) শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান বলেন, “সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ করতে আমাদের আন্তরিকতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
“আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এবার কেউ প্রশ্ন ফাঁস করার সাহস পাবে না। প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে চ্যালঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলতে চাই- এবার সাহস থাকলে আমাদের মোকাবেলা কর।”
র্যাব, বিজি প্রেস, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রশ্ন ফাঁসরোধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
প্রশ্ন ফাঁসের কারণে গত বছর ঢাকা বোর্ডের এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
বিরোধী রাজনৈতিক দল ও শিক্ষাবিদরা প্রশ্নফাঁসের সমালোচনায় মুখর হলেও সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রশ্ন ফাঁস নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুলে ধরা ‘সাজেশন’ কমন পড়ছে।
ফেইসবুকের যেসব পেইজে পরীক্ষার আগে এই ‘সাজেশন’ বা প্রশ্ন তুলে দেওয়া হয়, সেসব পৃষ্ঠা বন্ধে বিটিআরসিকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশের একজন প্রতিনিধি বৈঠকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসে বিজি প্রেসে ‘গ্রুপভিত্তিক’ তৎপরতা রয়েছে। বিজি প্রেসের ১০/১৫ জনকে ইতোমধ্যে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
পরে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের দৃঢ়তা দেখেছেন। আমরা এখানে সবকিছু বলছি না। যাদের জানা দরকার তারা সব জেনেছেন।”
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যারা কথা বলছেন তাদের সমালোচনা করে পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “যত বড় জ্ঞানী-গুণী হোক না কেন, তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করবে।”
প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ দিয়ে গতবছর গণমাধ্যমে কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও একটি নিবন্ধের মাধ্যমে জাফর ইকবালের সমালোচনার জবাব দেন।
শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান প্রশ্ন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ‘অটোমেশন’ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “তা করা না হলে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাবে না। প্যাকেজিংও অটোমেশন করতে হবে।”
প্রশ্ন ফাঁসকারীদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইন এবং পাবলিক পরীক্ষা আইনে দুটি মামলা করে সেগুলোর ‘ফলোআপ’ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেন সচিব।
প্রশ্ন ফাঁস রোধে তিন জেলায় অতিরিক্ত নজরদারি করতে হবে বলে শিক্ষাসচিব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালেও সভাকক্ষে সাংবাদিকরা থাকায় সেসব জেলার নাম উচ্চারণ করেননি তিনি।
সভায় জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৭২২ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
০১৭৭৭৭০৭৭০৫, ০১৭৭৭৭০৭৭০৬ এবং ৯৫৪৯৩৯৬ নম্বরে ফোন করে এই নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে যোগাযোগ করা যাবে বলেও সভায় জানানো হয়।