প্রশাসনের ব্যর্থতায় সাগর-রুনির হত্যারহস্য উদঘাটন হয়নি: তথ্যমন্ত্রী
ঢাকা: গণমাধ্যকে মিথ্যাচার, গুজব ও জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখার পরামর্শ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, “গণতন্ত্রকে যারা ক্রসফায়ারে ফেলতে চায় তারা ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে খণ্ডিত তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকারও আহবান জানান।
সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সময় তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণ যেমন জটিল তেমন কঠিন। গণতান্ত্রিক নেতা-নেতৃদের যেমন কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় তেমনি এ পর্যায়ে গণমাধ্যমের কর্মীদেরও প্রতিদিন কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। কারণ গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একই সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে, তাদের একই ঝুঁকি। গণতন্ত্রের যে সমস্যা গণমাধ্যমেরও সেই একই সমস্যা।”
সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রায় দুই বছর হতে চলেছে প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এটা প্রশাসনের একটি ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতা গণমাধ্যমের সব সদস্যদের পীড়িত করে। ক্ষেত্র বিশেষে আবার প্রতিবাদমুখর করে তোলে। আমি ক্ষুদ্ধ সংবাদকর্মীদের হৃদয়ের অবস্থানটা উপলদ্ধি করতে পারি।”
তিনি বলেন, “সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডে সাংবাদিকদের যে বিক্ষোভ তা ততদিন থাকবে যতদিন রহস্য ভেদ না করা হবে।”
এই বিক্ষোভকে যুক্তিযুক্ত বিক্ষোভ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “প্রশাসন কেন পারছে না তা পরিষ্কার করে না বলায় আপনারা আরো বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন। সব ঘটনার রহস্য ভেদ করা যায় তা ঠিক না। তবে কেন রহস্য ভেদ করা যায়নি তার কৈফিয়ত দিতে হয়।”
মন্ত্রী বলেন, “তারা কৈফিয়ত দেননি বলে আপনারা আরো বিক্ষুব্ধ। ১১ ফেব্রুয়ারির আগে রহস্য উন্মোচন হবে বলে প্রশাসন মনে করলে, আমি সে প্রসঙ্গে চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারছি না। ব্যাপরটা যাদের এখতিয়ারভুক্ত তারা শুধু চূড়ান্ত কথা বলতে পারেন। আমি শুধু বলতে পারি বিষয়টা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরব। আমি আশা করবো যাদের কাছে বিষয়টা রয়েছে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তারা একটা বিবৃতি দেবেন। তদন্ত কি পর্যায়ে রয়েছে আমি তার খোঁজ-খবর নেবো।”
ইনকিলাবের তিন সাংবাদিককে মুক্ত করাসহ সাংবাদিকদের নামে বিভিন্ন মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের দাবির প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “কোন মামলা কিভাবে রয়েছে তার তালিকা দিলে খোঁজ-খবর নিয়ে নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ইনকিলাবের তিন সাংবাদিক কারাগারে রয়েছেন।”
তাদের বিষয়ে শিগগিরই গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা বেরিয়ে আসবে এবং কাজ করতে পারবেন।”
বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী গভীরভাবে দেখে কেস টু কেস সমাধান করার আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বলেন, “ইনকিলাব তড়িঘড়ি করে তাদের কৈফিয়তটা দেশবাসির কাছে তুলে ধরেছেন। এ কারণে তাদের বিষয়টা সুরাহা করতে সহজ হয়েছে।”
সাংবাদিকদের সর্বশেষ বেতন কাঠামো অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তায়ন করা না হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। তবে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা করা হবে বলে জানান তিনি।
ডিআরইউ সভাপতির নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, অর্থসম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পদক মুরসালিন নোমানী, নারী বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা লুৎফা শাহানা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পদক সাজ্জাদ হোসেন, কল্যাণ সম্পাদক মোস্তফা কাজল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজিজুল পারভেজ, নির্বাহী সদস্য মঈনউদ্দিন খান, পিনাকী তালূকদার, মানিক মুনতাসির, পারভিন সুলতানা কাকন, ও তোফাজ্জল হোসেন।