প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সংশয়

01/05/2016 12:43 pmViews: 5

প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সংশয়

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট ২০১৬ প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান l প্রথম আলোচলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, অর্থনীতির ১২টি প্রধান সূচকের মধ্যে দুটি ছাড়া আর কোনো সূচকে গতবারের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়নি।
হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, শুধু রপ্তানি ও বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের সূচকে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন, শিল্প ও নির্মাণ খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি, প্রবাসী-আয়, শিল্প খাতের উৎপাদনসহ অন্যান্য সূচকে গতবারের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব দিয়েছে, এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান ও মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যে আটকে যাওয়া বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে কীভাবে প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে?
বিবিএসের হিসাবটি বিশ্বব্যাংক গ্রহণ করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক সূচকগুলো যদি মেলাতে চেষ্টা করি, তাহলে দেখা যায় মাত্র দুটি সূচকে গতবারের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।’
জাহিদ হোসেন এও বলেন, প্রবৃদ্ধি একটি সংখ্যা। তাই সংখ্যার বিতর্কে না গিয়ে প্রবৃদ্ধি কীভাবে হচ্ছে, তা টেকসই কি না, সেটিই বিবেচনা করতে হবে। আয় বৃদ্ধি, ভালো কর্মসংস্থান, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসেবার মান যদি ভালো না হয়; আবার সবাইকে যদি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত করা না যায়, তবে কোনো লাভ হবে না। তাঁর মতে, এ বছর প্রবৃদ্ধি হয়েছে মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কারণে। প্রতিবছর এ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে না। যদি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ত, তাহলে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পেত। এটি প্রতিবছর প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করত।
চিমিয়াও ফান মনে করেন, মানসম্পন্ন ও টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ দরকার। বর্তমান প্রবৃদ্ধিকে আরেক ধাপে উন্নীত করতে হলে এর মান দেখতে হবে; আবার যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা টেকসই কি না, সেটিও বিবেচনায় আনতে হবে। সরকারি বিনিয়োগের মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বিনিয়োগ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলছে, জ্বালানি সংকট ও অবকাঠামো ঘাটতি পূরণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আনতে ব্যবসায়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা ও সুশাসনের অভাব ঋণ প্রদান সীমিত করেছে।
নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এক দশক ধরে বাংলাদেশের ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, দুই কোটির বেশি জনসংখ্যা—বিশ্বের এমন ১১৮টি দেশের মধ্যে গত অর্থবছরে মাত্র ১২টি দেশ ৬ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, অর্থনীতি যদি একই ধারায় অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে।
বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সামনে চারটি ঝুঁকি আছে। ঝুঁকিগুলো হচ্ছে প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির ওপর অনিশ্চয়তার প্রভাব, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, ইউরোপের অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে রপ্তানি খাতে প্রভাব এবং প্রবাসী-আয়ে অনিশ্চয়তা।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে বলে বিশ্বব্যাংক আশা করছে। সংস্থাটি আরও বলছে, গড়ে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারলে ২০৩০ সালের দিকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবে বাংলাদেশ।
জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় সম্পর্কে জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ওঠানামার সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয়ের একটি নীতিমালা থাকা উচিত। তিনি মনে করেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ফলে দৃশ্যমান কোনো প্রভাব পড়বে না।

Leave a Reply