প্রধান বিচারপতি এখন কাঠগড়ায় : রিজভী

25/08/2017 5:33 pmViews: 9

প্রধান বিচারপতি এখন কাঠগড়ায় : রিজভী

 

রিজভীরিজভী

অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এখন কাঠগড়ায়।তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সিনহার আয়-ব্যয়ের তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের আক্রমণাত্মক বক্তব্যে সবমহলে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঠিক তখনই আয়-ব্যয়ের এ তদন্তকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরকারের প্রতিশোধ গ্রহণের পালা শুরু হলো বলে সবাই মনে করছে।

সর্বোচ্চ আদালতকে নতজানু রাখতে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। প্রধান বিচারপতি এখন আওয়ামী লীগের কাঠগড়ায়। আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ঠিক যেভাবে বিরোধী দলকে হেনস্তা ও হয়রানী করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নামে দুদক এবং এনবিআর-কে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা দায়ের করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুতে এটি আরো স্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো-সরকার যাদেরকে তার বিরোধী পক্ষ মনে করে তাদের বিরুদ্ধেই দুদক-এনবিআর এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে বানোয়াট মামলা দায়ের করে।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে পর্যবেক্ষণগুলি দিয়েছেন তা রায়েরই অংশ। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা হুমকির মুখে রায়টি বাতিল করতে চাচ্ছে। দু:শাসনের প্রকোপে আইনের শাসন অদৃশ্য হয়।

যেহেতু দু:শাসন বিরাজমান তাই ভয় দেখানো হুমকিরই জয়জয়কার চলছে। কারণ ক্ষমতাসীনরা নৈতিকভাবে পরাজিত। সেজন্য মাংশপেশীর ওপর তারা নির্ভর করতে চাচ্ছে। এই রায়ের পর্যবেক্ষণে যেহেতু পার্লামেন্টকে অপরিপক্ক ও অকার্যকর বলা হয়েছে, সেহেতু বর্তমান সংসদ অবৈধ এবং সেজন্য সরকারও বেআইনী।

অতএব নিজেদেরকে ইতিহাসের আবর্জনায় নিক্ষেপ না করে অবিলম্বে পার্লামেন্ট বাতিল করে আওয়ামী জোট সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি। রিজভী বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর চলছে অত্যাচারের স্টিম রোলার। যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুম. খুন ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে গোটাদেশ এখন বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই সুদীর্ঘ বিস্তৃত বিষাক্ত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। বেআইনী গুম, অপহরণ ও গুপ্তহত্যা চলমান রাখতে সরকার নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে। ক্ষমতা যেন হাতছাড়া না হয় সেজন্যই এই রক্তশীতল করা পরিকল্পনা।

জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে ছাত্র-যুবকরা আওয়ামী সরকারের প্রতিশোধের বলি হচ্ছে প্রতিদিনই। গতকাল ঘুম থেকে তুলে নিয়ে নোয়াখালী জেলাধীন বেগমগঞ্জ থানার ৪ নং আলাইয়ার ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী যুবদল এর যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আলমকে বন্দুকযুুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে।

বগুড়া জেলাধীন শাহজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়ন ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মাকসুদুল হক পিন্টুকে আটকের পর পুলিশী নির্যাতনে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সর্বোচ্চ বিচার বিভাগকে আক্রমণ করাতে সরকার বোধ হয় কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেই ধারণা যাতে মানুষের মনে দৃঢ় না হয় সেজন্য সরকারের প্রলয়ঙ্কারী ক্ষমতা জানান দিতে তারা এখন বিচার বহির্ভূত হত্যার দায়িত্ব দিয়েছে পুলিশকে।

পুলিশ বগুড়া ও নোয়াখালীতে বিএনপি এবং যুবদলের দুই নেতাকে হত্যা করে সরকারের বিশস্ততার প্রমান দিলো। এসব ন্যাক্কারজনক ও পৈশাচিক ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, আপনারা নিজের দেশের লোককে হত্যা করছেন, মানুষ কিন্তু কিছুই ভুলে যায়না।

মনে রাখবেন হিংসা থেকে হিংসার জন্ম দেয়। হিংসা থেকে তৈরী হয় জিঘাংসার বিভিষিকা। আমি আবারো মোঃ আলমকে বন্দুকযুুদ্ধের নামে হত্যা এবং মাকসুদুল হক পিন্টুকে পুলিশী নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

বন্যা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, জাতিসংঘ বলেছে, বন্যায় ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র এবং এই নদীগুলোর শাখা ও উপনদীগুলোর প্রবল স্রোত জনশুণ্য গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার পানিতে ভাসছে ঘরবাড়ী, ভাসছে আসবাবপত্র।

বন্যার পানি কোথাও কোথাও কমতে শুরু করলেও বন্যাক্রান্ত মানুষ সব কিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা বাড়িঘর, সহায় সম্পদ, ফসল সব হারিয়েছেন। এসব মানুষের এখনই খাদ্যের প্রয়োজন। একটা ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে।

দুই তিন মাসের জন্য্য পূর্ণাঙ্গ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। অথচ ভোটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে খাদ্যমন্ত্রী, ত্রাণমন্ত্রী প্রতিনিয়ত বলছেন দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিনিয়ত তাদের মিথ্যাচার ও চাপাবাজির একটাই কারণ মিথ্যার ওপর ভর করেই তারা ক্ষমতায় আছে।

দেশের বন্যা দূর্গত এলাকার মানুষ কত যে দু:খ কষ্টে আছে তা তারা দেখতে পান না। বন্যার্তরা কেঁদে কেঁদে দু’মুঠো ভাত চাইছে। একটু আশ্রয় চাচ্ছে। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েই তাদের ত্রাণ কর্ম সমাপ্তি টানছেন। বানভাসী দু:খী মানুষের প্রতি তাদের কি নিদারুণ পরিহাস।

বন্যায় জীবনযাপনের প্রবাহমানতায় মহাবিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো যেন ধ্বংসস্তুপ। গুদামে খাদ্য নেই, ব্যাংকসহ সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুট করে শুণ্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের কারণে দেশের ৯০-ভাগ সড়ক-মহাসড়ক এখন খানাখন্দে বেহাল দশা। খানাখন্দ ও ভাঙা সড়কে মানুষ কিভাবে এ পবিত্র ঈদে বাড়ি যাবে সর্বত্র তা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অথচ জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে উৎসবের ঘনঘটা।

আওয়ামী নেতাদের লুটের টাকায় কানাডায় বেগমবাজার আর মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরি হচ্ছে। সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, দেশের খাদ্য ঘাটতির কথা যখন আমাদের দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তখন আওয়ামী নেতারা বলেন এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি।

আমরা আগেও সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম দেশের খাদ্য ভান্ডারগুলো খালি। এখন জাতিসংঘও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আসলে সারাদেশে বিশেষভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের আঘাত শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা মিথ্যাচার করে আর পার পাচ্ছেন না, শুধু দেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমই নয়, বিশ্ব সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে বলে রিজভী জানান।

সংবাদ সম্মেলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply