প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই হবে
প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই হবে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় সরকারের পূর্বনির্ধারিত বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই অবৈধ সরকার আগেই রায় লিখে রেখেছে। বিচার হবে প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন, তাই। গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, যিনি সরকারের বিশেষ দূত- হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন- ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যেই খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।’ তাহলে দেশনেত্রীর মামলার রায় কি পূর্বনির্ধারিত? তাহলে এই প্রহসনের বিচারের তো কোনো প্রয়োজন ছিল না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে যে আইনের শাসন নেই, ন্যায়বিচার সূদূরপরাহত সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
বিচার হবে- প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই। বিচারাধীন মামলা নিয়ে এরশাদের বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল হলেও এখনো পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য ২৪টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ‘দুটি মিথ্যা’ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হওয়ার নজিরবিহীন নির্যাতন, তারিখে তারিখে জামিন দেয়ার নজিরবিহীন আদেশ- পুরো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নজিরবিহীন দ্রুততার সঙ্গে মামলা শেষ করার চেষ্টা প্রমাণ করে এই সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় করে বলেই তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। যেভাবে পুলিশ-র্যাব দিয়ে আদালত ও আদালত সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখা হয় তাতে মনে হয় কোনো সামরিক শাসনের অধীনে সামরিক আদালতে এই বিচারকার্য চলছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সর্বাধিক জনপ্রিয় একজন নেতা। যিনি বারবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, তিন বার প্রধানমন্ত্রী ও দুই বার বিরোধী দলের নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। যিনি দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন; যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ ১২ মাস কারাবরণ করেছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই ধরনের অবমাননাকর, অমানবিক আচরণ শুধু সামরিক শাসন ও ফ্যাসিবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা সরকারের এহেন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। মির্জা আলমগীর বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে সারা দেশে নতুন করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্রসফায়ার ও গুমের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বছর নির্বাচনের বছর। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যখন সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ ও সমান্তরাল মাঠ তৈরি করার প্রয়োজন বেড়ে চলেছে তখন এই ধরনের ক্রসফায়ার, গুম, খুন, গ্রেপ্তার এবং নির্যাতন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সব সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। ২০১৭ সালের ২০শে ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২২শে জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের সাত বিভাগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, একমাস দুইদিনে ৫২৮টি নতুন মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৪ হাজার ৭০৭ জনকে। তার মধ্যে ১৫১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া একজন গুম ও একজন খুনের শিকার হয়েছেন। অজ্ঞাতনামা আসামির নাম দিয়ে গ্রেপ্তার বাণিজ্য চালাচ্ছে পুলিশ। অন্যদিকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ২২শে জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৪টি। আসামির সংখ্যা ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪৪৯ জন। এ সময় খুনের শিকার হয়েছেন ৭৭৩ জন। তিনি বলেন, এই অনৈতিক সরকার পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে স্বঘোষিত সরকার আবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচনের আগেই বিরোধী দলকে মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার হীন চক্রান্ত করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বলপূর্বক দেশ থেকে বের করে দেয়া ও পদত্যাগে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিঃশেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের আচরণবিধি সরকারের ইচ্ছে মতোই হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে। আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম তাদের ভাবতে কষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। যে যুদ্ধ ছিল অধিকার আদায়ের যুদ্ধ, যে স্বাধীনতা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার, সেই যুদ্ধকে অপমানিত করে; সেই চেতনাকে ধূলিসাৎ করে আজ একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মামলা রেখে নির্বাচন করা যায় না। গ্রামের কর্মীরা পর্যন্ত মামলার মধ্যে পড়ে আছেন। বিএনপি মহাসচিব সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার করুন। ক্রসফায়ার, হত্যা, গুম ও খুন বন্ধ করুন। গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। তিনি বলেন, নির্বাচনের পূর্বশর্ত বলে কিছু নেই। নির্বাচন করতে হলে সমান্তরাল মাঠ তৈরি করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে আমাদের মূলকথা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।