প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী, প্রত্যাখ্যান : সমাবেশ নিষিদ্ধের প্রতিবাদে আজ জেলা সদরে বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আজ রবিবার দেশের সকল জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবকে ‘সংবিধান পরিপন্থী’ আখ্যায়িত করে দলটি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে তারা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। এ প্রস্তাব সম্পূর্ণ সংবিধান পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
শনিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকের পর ব্রিফিংকালে এ কর্মসূচী ঘোষণা করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রবিবার ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করবে তারা। এছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরবেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া।
ব্রিফিংকালে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। অথচ একদিন পরই সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তিনি অগণতান্ত্রিক আচরণ করলেন। সরকারের এ ধরনের আচরণ মেনে নেয়া যায় না।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়ে সরকার কথা বলার সব পথ বন্ধ করে গণতন্ত্রের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দেশের মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসছে। তাই জানালা-দরজা খোলার জন্য আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই বিরোধী দলের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশ মাতৃক পরিষদ নামের একটি সংগঠন আয়োজিত ‘গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও অন্তরে তা বিশ্বাস করে না। তারা সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? তিনি বলেন, সরকার ভিন্নমত পোষণকারীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করছে। জনগণের দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধী দল যেন আন্দোলন করতে না পারে সেই জন্যই দমন পীড়নের রাস্তা বেছে নিয়েছে সরকার। কিন্তু দমন পীড়ন করে আন্দোলন স্তব্ধ করা যায় না, তা ইতিহাস থেকে সরকারের শিক্ষা নেয়া উচিত।
ফখরুল বলেন, দেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এমএ তাহেরের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মোঃ ইব্রাহীম, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, ড. তুহিন মালিক প্রমুখ।
ফখরুল বলেন, দেশের দুর্ভাগ্য এমন একটি দল ক্ষমতায় আছে, যারা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তারাই গণতন্ত্র মানে না। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে এটাই প্রমাণ করেছে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা বাকশাল কায়েমের পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আছে। কেউ কোন কথা বলতে পারে না, কথা বললেই তার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
ফখরুল বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়ন না করার জন্যই সরকার নানাভাবে কূটকৌশল করছে। প্রশাসন দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেছিলেন যদি লগি-বৈঠা দিয়ে আঘাত করা হয় তবে আমরাও দা-কাস্তে দিয়ে প্রতিরোধ করব। এ বক্তব্যের পর তাকে দু-তিনবার গ্রেফতার করার চেষ্টা করেছে সরকার। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী কায়েম করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, পূর্বেও বাকশালের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হয়েছিল কিন্তু দেশের মানুষ যুদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে।
ফখরুল বলেন, আজ সারাদেশের মানুষ দেশের রাজনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। যে চেতনা নিয়ে মানুষ যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছিল তা আজও অর্জিত হয়নি। দেশের গণতন্ত্র আজ অবরুদ্ধ, পর্যুদস্ত ও আহত। যারা নিজেদের এ দেশের গণতন্ত্রে ধারক হিসেবে দাবি করেন তাদের হাতেই বার বার গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল কায়েম করে প্রথম গণতন্ত্র হত্যা করা হয়। আজ আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। সরকার ৯০ শতাংশ জনগণের দাবিকে দমন করতে চাচ্ছে। কিন্তু জনগণ কখনও তা হতে দেবে না।
ঢাকা ও আশপাশের নেতাদের সঙ্গে ফখরুলের বৈঠক ॥ ২৫ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঢাকা জেলা ও আশপাশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বেলা ১১টা থেকে প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী দলের চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলীয় নেতাদের ২৫ অক্টোবর যে কোন মূল্যে সমাবেশ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া কোন বাধা এলে তা মোকাবেলার উপায় নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জম হোসেন, ঢাকা জেলা সভাপতি আব্দুল মান্নান, দলের যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এ্যাডভোকট তৈমুর আলম খন্দকার, গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান প্রমুখ।