প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবকে ইতিবাচক বললেন বিশিষ্ট নাগরিকরা :জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যাখ্যান

18/10/2013 7:19 pmViews: 15

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে শান্তির পথে ফিরিয়ে আনবে বলে মন্তব্য করে তাঁরা বলেছেন, ২৫ অক্টোবরকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তাও কেটে যাবে। একই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন, বল এখন বিরোধী দলের কোর্টে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সংঘাতময় রাজনৈতিক কর্মকা- পরিহার করে জনগণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় পার্টি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আজ বৈঠক করে তাঁরা স্ব স্ব অবস্থান ব্যাখ্যা করবে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেছেন, মহাজোট সরকার তাঁদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আরেক কদম বাড়লেই সমাধান হতে পারে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ২৪ অক্টোবরের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর দেয়া প্রতিক্রিয়ায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক এবং গ্রহণযোগ্য। সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবের মাধ্যমে সমস্যার একটি ইতিবাচক সমাধানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপি বহুবার বলেছে তাঁরা এই সরকারের অধীনে নয় ভিন্ন কোন নামে ভিন্ন কোন ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হলেও নির্বাচন করবে। এই প্রস্তাব তাঁদের সেই অবস্থানকেই সমর্থন করে। আমি আশা করি বিএনপি এখন সংঘাতময় রাজনৈতিক কর্মকা- পরিহার করে জনস্বার্থে আলোচনার টেবিলে বসবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের যদি আরও ছোটখাট কোন দাবি দাওয়া থাকে তাও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বিএনপিকে এখন আলোচনার টেবিলে বসতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান এ প্রসঙ্গে বলেন, অবশ্যই প্রস্তাবটি ইতিবাচক। এমন প্রস্তাব আসার পর বিএনপিকে আলোচনায় বসতেই হবে। বিএনপি কী চায় তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁরা কী হলে সন্তষ্ট হবে তাও কেউ জানে না। কাজেই আলোচনা ছাড়া সঙ্কট সমাধানের কোন পথ নেই।
বিশিষ্ট আইনজ্ঞ শাহদীন মালিক প্রস্তাবটি ইতিবাচ এবং অনেকটা অপ্রত্যাশিত বলে মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গত কিছুদিন ধরে যেভাবে সংবিধানের আলোকে শক্ত অবস্থান নিয়ে বর্তমান সরকারের অধীনেই যে নির্বাচনের কথা বলে আসছিলেন সেখান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। তিনি সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে একটি সমঝোতার পথ সৃষ্টি করেছেন। দেশের সঙ্কট সমাধানে এটি একটি বড় উদ্যোগ। তবে ভাষণে সর্বদলীয় সরকারের বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরলে ভাল হতো। কত জন নিয়ে সর্বদলীয় সরকার হবে সেখানে কোন দলের সদস্য কত হবে এই বিষয় নিয়ে বিএনপি এখন কথা বলতে পারে। আলোচনার প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপির এখন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সাধানে এগিয়ে আসা উচিত। জাতীয় পার্টি এ বিষয়ে এখনই কোন মন্তব্য করছেন না। আজ দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠক ডেকেছেন দলের চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। এর পরই জাতীয় পার্টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন বিষয়টি ইতিবাচক। এতদিন যে অচলাবস্থা চলছিল তার অবসান হবে। সব দলের অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম হবে বলেও দলের নীতি নির্ধারণী মহলের এই সব নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখরুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের পর বল এখন বিরোধী দলের কোর্টে চলে গেছে। এখন বিরোধী দলকে আলোচনায় বসে বাকি সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বিএনপি। তবে এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ্ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনে মনে হয়েছে অনেক দিন পর হলেও মহাজোট সরকার ও আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আমার মনে হচ্ছে এখন তাদের জনগণের দাবি নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী আরেক কদম বাড়ালেই দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী।
জানা যায়, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আজ শনিবার বিএনপি সর্বদলীয় সরকার গঠনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। বিকেলে ইস্কাটন রোডে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন। তা না হলে রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে দলটি।
উল্লেখ্য, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। কেউ কেউ ফোন রিসিভ করলেও এ ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি এলাকায় আছি। তাই এ ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া দেব না। এ ব্যাপারে দল থেকে প্রতিক্রিয়া দেবে।
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি এখন অসুস্থ, যশোরে অবস্থান করছি। আমি যতটুকু শোনেছি শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
তবে প্রধামন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপির নেতৃত্বে আঠারো দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেরারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, তাঁর এ ভাষণ জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের আন্দোলন বানচাল করার হীন উদ্দেশেই তিনি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। জাতির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোন বিকল্প নেই। দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। কাজেই আগামী ২৪ অক্টোবরের আগেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহাল করে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। জামায়াত নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতির উদ্দেশে বিভ্রান্তিকর ভাষণ দিয়েছেন। দেশবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ অন্তঃসারশূন্য কথামালার ফুলঝুড়ি ছাড়া আর কিছুই নয়। তার এ ভাষণ জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণের আন্দোলন বানচাল করার হীন উদ্দেশেই তিনি সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

Leave a Reply