প্রথম শ্রেণীতে শিশুদের ভর্তি পরীক্ষা যৌক্তিক নয়
শিশুকে যদি লেখা-পড়া শিখেই স্কুলে ভর্তি হতে হয়, তাহলে স্কুল পড়াবে কী? এমন পশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুদের অধিকার। একটি নির্দিষ্ট বয়স হয়ে গেলে শিশুরা স্কুলে যাবে।
দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত ও ১৬ কোটি মানুষকে মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে মানবপুঁজি হিসেবে গড়ে তোলারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। দিবসটি পালনের ৫০তম বর্ষপূর্তিতে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘সাক্ষরতা আর দক্ষতা, টেকসই সমাজের মূলকথা’।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, একটি শিক্ষিত প্রজন্ম ছাড়া সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। তাই জাতির পিতা ১৯৭২ সালে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি ৩৬ হাজার ১শ’ ৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭শ’ ২৪ জন শিক্ষকের পদ সরকারিকরণ করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা আইন-২০১৪ এর আলোকে যথাযথ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করুন, ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও আপনাদের সব কাজে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পে সাড়ে ১২শ কোটি টাকা দেয়। এ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়।২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর এ কার্যক্রম ফের চালু করা হয়।
শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে মানবপুঁজিতে উন্নীত করতে পারলে উন্নয়নের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
সবার জন্য শিক্ষা এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে আমরা সফল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ঘোষণা রাখা হয়। ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি আমরা নিশ্চিত করেছি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করেছি। পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ঝরেপড়া রোধে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মিড-ডে মিল চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উপবৃত্তির সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে আমরা ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৯শ’ ৭৭ জনে উন্নীত করেছি। ৯৬টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার ২৯ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য বিতরণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নিজস্ব বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং সংশ্লিষ্ট ভাষা জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে ৪শ’ ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সাক্ষরতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিবন্ধীদের সক্ষমতা বিকাশে প্রতিবন্ধী স্কুল করেছি। পরীক্ষার ক্ষেত্রে তাদের আধা ঘন্টা সময় বাড়িয়ে দিয়েছি।
তিনি জানান, অনুন্নত জনপদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যূষিত ৫২টি জেলার ১শ’ ৪৮টি উপজেলায় আমরা ১ হাজার ১শ’ ৪০ কোটি ২৬ লখ টাকা ব্যয়ে ২১ হাজার ৬শ’ ২৩টি ‘আনন্দ স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছি। ফলে, হতদরিদ্র ও ঝরেপড়ার শঙ্কাগ্রস্ত শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।