পৌর নির্বাচন : প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণায় উৎসবের আমেজ

উৎসবের আমেজে সারা দেশে শুরু হয়েছে পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এর মধ্যদিয়েই শুরু হয়েছে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ভোটযুদ্ধের মূলপর্ব। ভোটগ্রহণের ২১ দিন আগ থেকে নির্বাচনী প্রচারণার বিধান থাকায় ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা।তবে গত পাঁচদিন প্রার্থীরা প্রতীক ছাড়াই গণসংযোগ করে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় ও দোয়া কামনা করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দলীয় প্রার্থী প্রতীক নিয়ে প্রচার চালাতে পারেননি।
স্থানীয় সরকারের এ পৌরসভা নির্বাচনে সৃষ্টি হয়েছে নতুন আমেজের। এবারই প্রথম দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচন।এর মাধ্যমে সাত বছর পর কোনো নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষ সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে। এতে দলীয় প্রতীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে।
প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতীক আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। তারা আগেই থেকেই তাদের প্রতীকের পোস্টার প্রেসে ছাপিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সোমবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর তারাও তাদের ব্যানার ও পোস্টার তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। প্রতীক পেয়ে ইতিমধ্যেই মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে চিকা মারা শুরু করেছেন। প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় বইছে নির্বাচনী আমেজ। ছোট বড় সবাই নিজ নিজ দলের এবং সমর্থনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের পক্ষে প্রচারণায় কাজ করছেন। হাতে হাতে প্রার্থীর ছবিসহ প্রতীক নিয়ে ঘরে ঘরে চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।
এদিকে ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে লড়াইয়ের মাঠ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন শাসক দল আওয়ামী লীগ মনোনীত ৬ মেয়র প্রার্থী।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা বিএনপি পৌর নির্বাচন নিয়ে বেশ সতর্ক। সহজে হাল না ছাড়ার পক্ষে দলটির নেতাকর্মীরা। আর শাসক দল আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কলঙ্কমোচনে মরিয়া। দুই দলই কোমর বেঁধে নেমেছে। তাদের লক্ষ্য ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন।
এ নির্বাচনের শুরুতে আওয়ামী লীগের ২৩৪ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। ৬ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এখন ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন ২২৮ জন। অন্যদিকে ধানের শীষ নিয়ে লড়ছেন ২২০ জন মেয়র প্রার্থী। জাপার মেয়র প্রার্থী রয়েছেন ৭৩, জাসদের ২০, এনপিপি ১৭, ইসলামী আন্দোলন ৫৬ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন আরও ৩২ জন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর মোট সংখ্যা ২৭১। তবে ৭৬ পৌরসভায় শুধু রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন, এসব পৌরসভায় কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
যুগান্তরের ব্যুরো, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের পৌর এলাকায় মানুষ আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠেছে। প্রার্থীরা পথেঘাটে, হাটবাজারে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি কোলাকুলি করে সমর্থন ও সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। চা-মিষ্টির দোকানগুলোতে চলছে রমরমা বেচাকেনা। সব প্রার্থীই তার অনুসারি, সমর্থক ও ভোটারদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা রেখেছেন। এখন পান, সিগারেটের দোকানগুলোর প্রধান আলোচনার বিষয় পৌর নির্বাচন। কোন প্রার্থী কেমন, প্রচারে কে কি কৌশল নিচ্ছেন, তারা কাদের সমর্থন পাচ্ছেন অথবা পাচ্ছেন না- সে আলোচনায় কেটে যাচ্ছে ভোটের দিনরাত।
নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করায় স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর মেয়র প্রার্থীরা দলীয় পরিচয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তারা মিশে গেছেন স্বতন্ত্রদের দলে। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহীরাও রয়েছেন। জানা গেছে, স্বতন্ত্র পরিচয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী রয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক পৌরসভায়। এ সংখ্যা বিএনপিতে প্রায় ৩০ এর কাছাকাছি। এসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের প্রধান প্রতিপক্ষ তাদের নিজ দলের বিদ্রোহীরা। দুই দলের হাইকমান্ডের হুমকি-ধমকিতে দমেননি তারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, সরকারের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টি জেপি (মঞ্জু), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এনপিপি, পিডিপি, খেলাফত মজলিশ, এলডিপি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), তরিকত ফেডারেশন, জাকের পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সরকার সমর্থক ১৪ দল এবং বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট বিদ্যমান থাকলেও দলীয় প্রতীকের প্রথম এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা পৃথকভাবে লড়ছে। অর্থাৎ জোটে আছে, ভোটে নয়।