পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি: কাদেরের জবাবে ফখরুল
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে ‘অশালীন ও ব্যক্তিগত আক্রমণ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল খুব আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। সমস্ত রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে তিনি কথাগুলো বলেছেন এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছেন। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে এটুকু বলতে চাই, ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে সামাল দিতে পারবেন না। অযথা বেশি ঘাঁটাবেন না। কাদা থেকে কেঁচো বেরিয়ে আসে। আপনারা কী করেন গোটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। কীভাবে অর্থ উপার্জন করেন, সবাই জানে। আমরা আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করি। আমরা কারো পয়সায় রাজনীতি করি না।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার বিকেলে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন। ফখরুল সাহেব এখন চাঙা হয়ে গেছেন। টাকা পাচ্ছেন তো। টাকারে টাকা! আরব আমিরাতের টাকা, দুবাইয়ের টাকা। এই তো এল টাকা। ফখরুল সাহেব মহাখুশি।’
ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা কী করেন সেটা বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে সবাই জানে, হঠাৎ ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছেন। আপনারা কে কোথায় হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি করছেন। কে কোথায় ব্যাংকের লোন নিয়ে পাচার করে দিচ্ছেন। আপনারা কানাডাতে বেগমপাড়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করলেন সব খবর রাখি। কে কয়টা ব্যাংকের মালিক হলেন, কারা আমেরিকাতে কতগুলো বাড়ি করেছেন, আর দেশের মানুষের ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে সচিবদের জন্য বাড়ি করছেন। এগুলো মানুষের টাকা। এগুলো মানুষের করের টাকা। আপনাদের চেহারার দিকে তাকানো যায় না।
তিনি বলেন, আপনারা সব সরকারি গাড়ি-টাকা ব্যবহার করে যে লোকজন নিয়ে এলেন, বিশাল নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে, সরকারি জায়গার মধ্যে সেখানেও চেয়ার পর্যন্ত পূর্ণ করতে পারলেন না। ২২ হাজার চেয়ার ছিল। ২২ হাজার চেয়ার যদি পূর্ণ না হয় তাহলে কত লোক হয়েছিল! আমি কথাটা আলোচনা করতে চাইনি। যেহেতু উনি আমার নাম বলেছেন, সেই কারণে কথাগুলো বললাম। দিস ইজ ভেরি আনফরচুনেট! আমরা এটা আশা করি না, এত বড় রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকে অশালীন ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ আসবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একেবারে ভাগাড়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে আমরা যে দুর্ভিক্ষ দেখেছিলাম, আবার সেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কথাটা আমার নয়, কথাটা প্রধানমন্ত্রীর। এটাকে আবারও তলাবিহীন ঝুড়ি বলার অবস্থা তৈরি করেছে এই সরকার। রিজার্ভের পরিমাণ কমতে কমতে এমন জায়গায় এসেছে যে, দুর্নীতির কারণে…প্রতিটি খাতে এমন দুর্নীতি হচ্ছে যার ফলে আবার আজকে তলা বিহীন ঝুড়ির দিকে চলে যাচ্ছে।
মিথ্যাচার করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে, প্রতারণা করে তারা আবার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে গেছে দেশকে। আজকে শুধু নামমাত্র, মুখে বলা যে, গণতন্ত্র আছে। আসলে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। তাদের যেটুকু বলা হয়, তারা শুধু সেটুকুই বলবেন। তার বাইরে বলতে পারবেন না। যুবক-তরুণদের কর্মসংস্থান নেই। এই সরকার দেশকে আবারও দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে গেছে। ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। কয়েকদিন আগে একটি জরিপ হয়েছে, শতকরা ৩০ শতাংশ লোক এখন খাদ্য সংকটে ভুগছে। এ বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে হয়েছে। এখানে তো মানুষের কোনো অধিকার নেই। আমাদের রাজনীতি করার স্পেশ একেবারে কমিয়ে ফেলা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতই যদি আপনারা শক্তিশালী হোন, জনগণের প্রতি আস্থা থাকে তাহলে এত ভয় পান কেন! বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দেন না কেন! কেন আপনারা পরিবহন বন্ধ করে দেন? আপনাদের গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ যারা সভায় আসতে চায়, তাদের আঘাত করেন? একটাই কারণ, তারা জানে, গণতন্ত্র যদি ঠিক মতো চলে, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি কাজ করতে পারে তাহলে তারা কোনো দিনই ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না।
৭ই নভেম্বর বিএনপির উন্মুক্ত আলোচনা সভা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৭ই নভেম্বর সকাল ৭টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ১১টায় দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন ও দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত আলোচনা সভা করবে বিএনপি। এ ছাড়া, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন তাদের সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভার আয়োজন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব।