পেঁয়াজের দর ১০০ ছাড়াল
প্রতিবেদক : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) মাঠে নামিয়েও পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার। ট্রাকে করে খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করায় গত কয়েক সপ্তাহ মূল্য কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও হঠাত্ করেই দাম বেড়ে গেছে। শুক্রবার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোকামে সরবরাহ কম থাকায় তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ। তা ছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ঢাকার বাইরে থেকে পেঁয়াজ আনতে ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির তত্পরতা নিয়েও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। নির্ধারিত স্থানে নিয়মিত টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সমস্যায় পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে টিসিবির দ্বিগুণ দামে। এছাড়া টিসিবির ওয়েবসাইটের মূল্য তালিকার সঙ্গেও বাজার মূল্যের পার্থক্য দেখা গেছে। মূল্য তালিকায় পেঁয়াজ (আমদানি) প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।
এবিষয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস হোসেন বলেন, দাম বেড়েছে এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। পাইকারি বাজারে নিম্নমানের পেঁয়াজ ৬০ টাকা ভালো মানেরটা ৯০টাকা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এবং আজ (শুক্রবার) খাতুনগঞ্জে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা আমদানি পেঁয়াজ ৮০- ৮৫ টাকা। এর মধ্যে পাকিস্তানি কিছু ছোট পেঁয়াজ আছে যা ৭০ টাকা বড় ৭৫ টাকা আর চায়না ৭০ এবং মিয়ামরের পেঁয়াজ ৮০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে খুচরা বাজারের দাম বাড়ার সম্পর্কে তিনি বলেন, বাজারে দাম বেড়েছে এ বিষয়টি সঠিক নয়। এটি স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই তৈরি করে।
এর জন্য দায়ী কে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের সঠিক মনিটরিং না থাকার কারণে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজারের গুজব ছড়িয়ে দাম বাড়াচ্ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন বলেন, বাজারে সরবরাহ কম থাকায় মোকাম থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। বেশি দাম দিয়েও প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া ঢাকায় আনতে ট্রাকের ভাড়াও বেশি গুনতে হচ্ছে। তাই তারা বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলী জানান, তিনি ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন এক ট্রাক পেঁয়াজ আনেন। কিন্তু মোকামে সরবরাহ কম থাকায় তারা তিনজন ব্যবসায়ী মিলে এক ট্রাক পেঁয়াজ আনছেন। সরবরাহ কম থাকায় বাজার চড়া।
শুক্রবার সকালে গোপীবাগ রেলগেট বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। যে কারণে আমাদেরও বেশি দাম রাখতে হচ্ছে।
তবে টিসিবির পক্ষ থেকে খোলা বাজারে নির্ধারিত দামে অর্থাত্ ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা প্রাত্যহিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আজ থেকে রাজধানীতে পাঁচটি ট্রাক বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন স্থানে মোট ৩০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে টিসিবির পক্ষ থেকে।’ এ ছাড়া পেঁয়াজ আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে কেবল রাজধানী ঢাকাতেই নয়, রাজশাহীতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। রাজশাহীর বাজারে আজ প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, গত রোজার পর থেকে পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়। এর পর হঠাত্ করে মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় গত ১৯ আগস্ট ৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় টিসিবি যার বেশিরভাগ আমদানি হয়েও গেছে। আমাদানির পর থেকে ৪৭ টাকায় খোলা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও মাত্র আড়াই সপ্তাহের মাথায় ৮ টাকা বাড়িয়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি করে টিসিবি।