পেঁপের উৎপাদন প্রযুক্তি

08/06/2015 1:29 pmViews: 380

মাটি
উঁচু ও মাঝারি জমি ভাল। উপযুক্ত পরিচর্যার দ্বারা প্রায় সব ধরনের মাটিতেই পেঁপের চাষ করা যায়।

বীজের হার
দুই মিটার দূরে সারি করে প্রতি সারিতে ২ মিটার দূরত্বে চারা রোপণ করলে ১ হেক্টর জমিতে ২৫০০ গাছের জন্য ৭৫০০ চারার প্রয়োজন হয়। সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১৪০-১৬০ গ্রাম বীজ দিয়ে প্রয়োজনীয় চারা তৈরি করা যায়।
চারা তৈরি
বীজ থেকে বংশ বিস্তার করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৫-১০ সেমি আকারের ব্যাগে সমপরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। তারপর এতে সদ্য সংগৃহীত বীজ হলে ১টি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে। একটি ব্যাগে একের অধিক চারা রাখা উচিত নয়। ২০-২৫ দিন বয়সের চারায় ১-২% ইউরিয়া স্প্রে করলে চারার বৃদ্ধি ভাল হয়।

images
চারা রোপণ পদ্ধতি
দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে ৬০*৬০*৬০ সেমি আকারের গর্ত করে রোপণের ১৫ দিন পূর্বে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সেমি নালা রাখতে হবে।
রোপণ সময়
শাহী পেঁপে সারা বছর চাষ করা যায়।
সারের পরিমাণ

প্রতি পেঁপের গাছে নিম্নরুপ সার ব্যবহার করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/গাছ
ইউরিয়া ৪৫০-৫৫০
টিএসপি ৪৫০-৫৫০
এমপি ৪৫০-৫৫০
জিপসাম ২৪৫-২৫০
বোরাক্স ২০-৩০
জিংক সালফেট ১৫-২০
জৈব সার ১২-১৬

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি এক মাস অন্তর প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়। শেষ ফল সংগ্রহের এক মাস পূর্বেও সার প্রয়োগ করতে হবে। পচা গোবর, টিএসপি, জিপসাম, বোরাক্স এবং জিংক সালফেট গর্ত তৈরির সময় প্রয়াগ করতে হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা
প্রতি গর্তে ৩টি চারা রোপণ করা যায়। ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে। পরাগাণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরম্নষ গাছ রাখা হয়। ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হভে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে। দুই সারির মাঝঁখানের নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করা যায়। ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে পাকা ফল হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ণের মাধ্যমে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা যায়।
অন্যান্য পরিচর্যা
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন
পেঁপের ঢলে পড়া রোগে প্রচুর চারা গাছ মারা যায়। তাছাড়া এ রোগের জীবাণুর আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পচা রোগও হয়ে থাকে। পিথিয়াম এ্যাফনিডারমাটাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। বর্ষা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যায়। বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়। অনেক সময় জিংাকের অভাবে মোজাইকের মত লক্ষণ প্রকাশ পায়।
প্রতিকার
1. গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
2. বীজতলার মাটি ৫% ফরমালডিহাইড দ্বারা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
3. রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি হতে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
4. রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারি পার্শ্বের মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
5. জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা দূরীভূত হয়।

Leave a Reply